বাবার নামে সাগরদিঘি কলেজের নামকরণে ছাড়পত্র দেওয়ায় রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুরে সাগরদিঘি কলেজের নামকরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রণববাবু মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই বলেন, “নাম পরিবর্তন করে সাগরদিঘি কামদাকিঙ্কর স্মৃতি মহাবিদ্যালয় করার অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উদ্যোগী হয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে এই প্রস্তাব অনুমোদন করায় তাঁকে আমি ধন্যবাদ জানাই।” তবে তিনি এ-ও বলেন, “শুধু নতুন-নতুন কলেজ গড়ে নাম বদল করলেই হবে না। দেশে ৭৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩৭ হাজার কলেজ গড়ে তোলা হলেও ভারতে উচ্চশিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এখনও ৭ শতাংশ ছাড়ায়নি। হার কিছুটা বাড়লেও বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক পিছনের সারিতে। |
সাগরদিঘি কলেজের অনুষ্ঠানে প্রণব। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। |
যে লক্ষ্য নিয়ে কলেজ তৈরি ও সম্প্রসারণের কথা ভাবা হচ্ছে বাস্তবে তা হচ্ছে না। শুধুমাত্র ডিগ্রি নেওয়ার জন্য কলেজে গেলে হবে না, পঠন-পাঠনের মান উন্নয়ন দরকার। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে না পারলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।” এদিনই পরে সুতির আহিরণে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করে প্রণববাবু বলেন, ‘‘শিক্ষার উপরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে। মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আমি আশাবাদী।” জঙ্গিপুরের সব ক’টি অনুষ্ঠানেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তবে কোথাও তিনি বক্তব্য রাখেননি। এদিন সাগরদিঘির ধুমারপাহাড় গ্রামে একটি বেসরকারি সংস্থার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির শিলান্যাস অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে ছিলেন ফুটবলার গৌতম সরকার, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া-সহ কয়েকজন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ। সম্ভবত তাঁদের দেখেই প্রণববাবুর মনে পড়ে যায় এ বারে জঙ্গিপুরে তাঁর বাবার নামাঙ্কিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় থাকতে পারেননি তিনি। ৭ ডিসেম্বর খেলার দিন জঙ্গিপুরে এসেও নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি তিনি। প্রণববাবু আশ্বাস দেন, আগামী বছরে খেলার দিন মাঠে অবশ্যই থাকবেন তিনি। |
স্বপ্ন পূরণ
মুর্শিদাবাদের শিলপাড়া গ্রামের মাঠে ‘বহরমপুর সেনা ছাউনি’র শিলান্যাস করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বললেন, “বহু দিন আগে যখন এখানে মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন, আমি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছিলাম,
তখন এই এলাকায় সেনা নিবাস করার ইচ্ছা হয়েছিল। আমি আজ আনন্দিত, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও সেনাবাহিনী
সেই প্রস্তাব মঞ্জুর করেছে। রাজ্য জমি দিয়ে সেই স্বপ্ন বাস্তব করল।” গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি। |
বেসরকারি উদ্যোগে হওয়ায় স্পোর্টস অ্যাকাডেমি ও সাগরদিঘি কলেজের নামকরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেননি রাষ্ট্রপতি। তবে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া নবগ্রাম থানার শিলপাড়া গ্রামের মাঠে প্রায় ২৫০ একর জমিতে প্রস্তাবিত ‘বহরমপুর সেনা ছাউনি’র শিলান্যাস করেন এ দিন। বস্তুত এটাই ছিল দিনের প্রথম অনুষ্ঠান। এক সময় বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজরা ১৯০ বছর ভারত শাসন করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বহরমপুরে সেনা ছাউনি ছিল। ওই সব অতীত ইতিহাস টেনে প্রণববাবু বলেন, “এই সেনানিবাসের ফলে এলাকার আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে। নির্মাণ শিল্প ও অন্য কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ যুক্ত হতে পারবেন।”
এ দিকে ২৫০ একর জমিতে সেনা ছাউনির শিলান্যাস হলেও মোট জমি প্রয়োজন প্রায় ৬০০ একর। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এ কথা জানান ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল বিক্রম সিংহ। তিনি বলেন, “এখানে সেনানিবাসে ২৮০০ ট্রুপ সেনা থাকবে।” অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার সেনা নবগ্রামের ‘বহরমপুর সেনা ছাউনি’তে থাকবে। সেনা বাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুসারে সেখানে সেনাদের জন্য আবাসন তৈরি করা হবে। থাকবে হেলিপ্যাড, হাসপাতাল, স্কুল, শপিং মল, ইকোপার্ক-সহ আধুনিক পরিষেবা ও বিনোদনের ব্যবস্থাও। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে স্মরণ করিয়ে দেন, দেশে প্রথম দিকে নগরায়ণের কাজ শুরু হয়েছিল সেনা ছাউনি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই। |