পড়ে থাকা অর্থ দ্রুত খরচে এ বার হবে নগদ টাকা বিলি
ন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা বছরের পর বছর পড়ে থাকার নজির নতুন নয়। আবার কখনও কখনও বছরভর টাকা খরচের পরেও কিছু টাকা অবশিষ্ট থেকে যায় প্রতি বছরই। দুই ক্ষেত্রের মিলিত টাকার মোট পরিমাণ কয়েক বছরে বেশ মোটা অঙ্কে পৌঁছয়। এই প্রবণতা লক্ষ্য করে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সম্প্রতি এক চিঠিতে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, আগের বছরের টাকার খরচের হিসাব না দিলে চলতি আর্থিক বছরের বরাদ্দ অর্থ মিলবে না। আর এরপরই নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নানা প্রকল্পের পড়ে থাকা অর্থ দ্রুত বরাদ্দ করার পাশাপাশি উপভোক্তাকে নগদে অর্থ দেওয়া হবে। চলতি মাসেই ওই কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “এটা ঠিক যে, দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রকল্পের টাকা পড়েছিল। তবে এ বার প্রকল্প রূপায়ণে পদক্ষেপ করা হয়েছে।” প্রকল্প রূপায়ণ দ্রুত গতিতে হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে কড়া নজরদারিও চলবে বলে তিনি জানান।
জৈব সার তৈরি, প্রাণী পালন, মৎস্য চাষি ও ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাহায্যে ওই টাকা ব্যয় করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। বরাদ্দ টাকায় মাছ বিক্রির জন্য সাইকেল, বাক্স, দাঁড়িপাল্লা, বঁটি দেওয়া হবে। শুধু তাই নয় যাতে প্রাথমিক ভাবে একজন গরিব মানুষ মাছ চাষ শুরু করতে পারে, সে জন্য নগদ ২ হাজার টাকা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পরিষদ! এমন ২০০ জনকে এ বার সাহায্য দেওয়া হবে। আগে নগদ টাকা দেওয়া হত না। যাতে একজন গরিব মানুষ মাছ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে পারেন সে জন্য কখনও শুধু সাইকেল দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও মাছ রাখার বাক্সও দেওয়া হয়েছে। এ বার একজন যাতে ব্যবসা শুরু করার রসদও পায় সে জন্য দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থও। এক একজনের জন্য ১০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ২০০ জনের জন্য এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ২০ লক্ষ টাকা। যেমন সাইকেলের দাম ধরা হয়েছে ৪ হাজার টাকা। বক্স ৩ হাজার টাকা। বঁটি, দাঁড়িপাল্লা, বাটখারা মিলিয়ে ১ হাজার টাকা এবং নগদ ২ হাজার টাকা।
মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট বলেন, “একজন গরিব মানুষের হাতে টাকা না থাকলে তিনি ব্যবসা শুরু করবেন কী করে? যাতে ব্যবসা শুরু করতে না অসুবিধে হয় সে জন্যই নগদ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। এই টাকা দেওয়া হবে পিছিয়ে পড়া গ্রামের উন্নয়নের টাকা থেকে।” অবশ্য পিছিয়ে পড়া গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ীরাই এই সুবিধে পাবেন। তার জন্য উপভোক্তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে কর্মাধ্যক্ষ জানিয়েছেন। একই ভাবে ওই পিছিয়ে পড়া গ্রামেই ২০০ জন মৎস্য চাষিকে দেওয়া হবে মাছের চারা ও চুন। প্রত্যেককে ৫০ কেজি চারা মাছ, যার দাম ৭ হাজার টাকা ও জল পরিষ্কার করার জন্য ৫০ কেজি চুন, যার দাম ৫০০ টাকা, তা দেওয়া হবে। এ ভাবেই ৬১টি জায়গায় জৈব সার তৈরি, ২০৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কিচেন গার্ডেন, স্ব-সহায়ক দলের মাধ্যমে যে সব গ্রামীণ শিল্পীরা কাজ করেন, তাঁরা যাতে একটি জায়গায় কাজ করতে পারেন সে জন্য ৪টি শেড তৈরি, শালপাতার থালা তৈরি ও তা সেলাইয়ের যন্ত্র, জল ধরে রাখার জন্য ছোট ছোট ডোবা তৈরি-সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এতে খুশি পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষ। পিছিয়ে পড়া বলে পরিচিত কর্ণগড় এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ভক্তিপদ জানার কথায়, “গ্রামে সেচের সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়াও বহু গরিব মানুষের বসবাস। তাঁদের যে কোনও ভাবে সাহায্য করলে তো সকলেই উপকৃত হবেন।” গ্রামের শিক্ষক তাপস সাহুর কথায়, “গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন হলে আর গ্রামের মানুষকে বাইরে বাইরে ঘুরে মজুর খেটে খেতে হবে না।” টাকা ফেলে না রেখে দ্রুত খরচ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনও অবশ্য এ বার উদ্যোগী হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্য সরকার পিছিয়ে পড়া গ্রামের উন্নয়নে টাকা দিতে শুরু করে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৬৩৭টি গ্রাম পিছিয়ে পড়া বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে ১ কোটি ৫২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছিল জেলা। বেশির ভাগ টাকা খরচ হলেও ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা খরচ করতে পারেনি। ২০০৮-০৯ আর্থিক বছরে আরও ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা পায়। এক্ষেত্রেও বেশির ভাগ টাকা খরচ করা গিয়েছিল। এই দু’বছর মিলিয়ে টাকা পড়েছিল মাত্র ১৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ আর্থিক বছরে পরিকল্পনা করতে না পারায় এই প্রকল্পে কোনও টাকা মেলেনি। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ফের ১ কোটি ১৫ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা পায় জেলা। কিন্তু কোনও টাকা খরচ করতে পারেনি। ফলে চলতি আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ ৫১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকাও পায়নি জেলা। সম্প্রতি এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সে কথা জানিয়েও দেয়। তারপরই পড়ে থাকা অর্থ খরচে উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.