‘টাইগারের’ সামনে আজ বেঁচে থাকার ম্যাচ করিমের
ফেড কাপের বদলা নেওয়ার সুযোগ আপনার সামনে....?
প্রশ্ন শুনে করিম বেঞ্চারিফার মুখটা যেন আরও তেতো হল।
“এটা আই লিগ। আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।”
‘টাইগার’-এর টিমের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে স্বাভাবিক ভাবেই বদলা নেওয়ার কথা বলতে নারাজ বাগান কোচ। “প্রথম কুড়ি মিনিট খুব ভাইটাল। সতর্ক থাকতে হবে। ফেড কাপ সেমিফাইনালে তো ওই সময়ের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গিয়েছিল,” মরক্কানের গলায় সতর্কতা। কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত মনে হয় তাঁকে।

সামনে সুভাষ কাঁটা।
ময়দান থেকে মিনিট পঁয়তাল্লিশ পর যুবভারতীতে গিয়ে দেখা গেল সেখানে সতর্কতা আছে, কিন্তু আতঙ্ক নেই। একেবারে অন্য মেজাজে ‘টাইগার’ সুভাষ ভৌমিক। “আরে আমি তো বাকি সব ম্যাচ জিতলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারব না। তা হলে তাড়াহুড়োর কী আছে। এক এক পয়েন্ট নিয়ে এগোই না। পাঁচ-ছয়ে থাকলেই তো হল,’’ লাল-জ্যাকেট পরে ‘যুবক’ সেজে আসা চার্চিল টিডির কথা শুনলে মনে হয়, বাঁচার অঙ্কটা করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই।
করিম বেঞ্চারিফা বনাম সুভাষ ভৌমিক দুই আই লিগ জয়ী কোচ মুখোমুখি হওয়া মানেই ধুন্ধুমার ট্যাকটিক্যাল যুদ্ধের আবহ। একে অন্যকে পিষে ফেলার মরিয়া মানসিক প্রতিজ্ঞা।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সুভাষের টিমের সামনে পড়লেই করিমের পা কাঁপে। আবার চার বছর চার মাস আগেই ঘটেছিল অন্য ঘটনা। আই লিগ ডার্বিতেই করিমের টিমের ৫-৩ গোলে জয়ের জেরে ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে হয়েছিল সুভাষকে। “আমাকে কলকাতা ছাড়া করেছিল যে লোকটা, তাকে তো গুরুত্ব দিতেই হবে,” এখনও টংকার ওঠে, এমনকী সুভাষের পেসমেকার বসানো বুকেও।
কিন্তু আজ শুক্রবার সন্ধ্যার যুবভারতীতে দুই আই লিগ জয়ী কোচের লড়াইয়ের যা মঞ্চ, সেখানকার প্রেক্ষাপট একেবারে ভিন্ন। দু’জনের টিমই যে এই মূহূর্তে অবনমনের আওতায়। বুক বাজিয়ে কথা বলার জায়গায় নেই কেউই। ফলে হুঙ্কার-টুঙ্কার সিন্দুকে ভরে রেখে নামছেন সুভাষ-করিম। বরং চলছে একে অন্যকে পিঠ চাপড়ানোর এক চমকপ্রদ অধ্যায়। সুভাষ যেমন বলছেন, “মোহনবাগান কিন্তু সালগাওকরের বিরুদ্ধে জেতার মতোই খেলেছে। কপাল খারাপ তাই হেরে গেল।” নিউ আলিপুর নিবাসী টিডি-র মন্তব্যে উচ্ছ্বসিত করিম পাল্টা প্রশংসা করে বলছেন, “চার্চিল খুব ভাল টিম। ফেড কাপ জিতে এসেছে। ওদের টিডি-কোচও যথেষ্ট সম্মানীয়।”
বাইরে পিঠ চাপড়ানো চললেও, ড্রেসিংরুমে অবশ্য দু’জনেই অঙ্ক কষে চলেছেন নিরন্তর। বেঁচে থাকার অঙ্ক। ক্লাবের বাইরেও যেখানে কাজ করছে ব্যক্তিগত ইউ এস পি বাড়ানোর প্রবল চেষ্টা। সুভাষ যেমন ঠিকই করে ফেলেছেন, বর্তমান পারিবারিক পরিস্থিতিতে আর গোয়া বা অন্য কোনও জায়গায় কোচিং করাবেন না। কলকাতাতেই ‘কাজ’ করবেন। ময়দানে জল্পনা উড়ছে, আসিয়ান জয়ী কোচের জন্য বাংলার একটা ক্লাবের মঞ্চ নাকি প্রস্তুতও হচ্ছে। আর করিম? ওডাফা ওকোলির সঙ্গে তাকেও পরের মরসুমে গুডবাই জানানো হবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বাগান-কর্তারা। নতুন ক্লাবকে আগ্রহী করতে করিমের তাই দরকার ইচে-কাতসুমিদের নিয়ে ভাল ফল করে নিজের বাজার তৈরি করা।

ম্লান বাগান প্র্যাকটিস। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার।
দু’কোটির ওডাফা ওকোলি এ দিনও মিনিট পাঁচেক ছিলেন অনুশীলনে। টিমের সঙ্গে প্রার্থনা সেরেই কিছুক্ষণ তাঁবুতে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন বিশ্রাম নিতে। পয়লা মার্চের আই লিগ ডার্বিতে তাঁর খেলার সম্ভাবনা ক্রমশই কমছে। মোহন-কোচ আবার এ দিনই গোলমেশিনের না খেলার জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছেন এই বলে যে, “চার-পাঁচ দিন পুরো অনুশীলন না করলে বলা সম্ভব নয় ওডাফা ডার্বিতে খেলবে কি না।”
ওডাফা নিয়ে বাগানে সামান্য হা-হুতাশ থাকলেও, চার্চিলের কোনও মাথাব্যথা নেই। চার্চিল টিডি যেমন বলে দিলেন, “ওডাফা ফিট অবস্থায় যে ম্যাচগুলো খেলেছে সেখানে আহামরি কিছু হয়েছে? মেসি কি সব ম্যাচ জেতাতে পেরেছে বার্সেলোনাকে?” আর তাঁর টিমেরই মাঝমাঠের হৃৎপিণ্ড শাবানার মন্তব্য, “ফেড কাপে ওডাফা তো দলে ছিল তবুও আমরা জিতেছি। ওর থাকা না থাকার কোনও গুরুত্ব নেই আমার কাছে।”
আজ বাগানে খুব একটা পরিবর্তন করছেন না করিম। কাতসুমির সঙ্গে ক্রিস্টোফারই শুরু করবেন ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে। মাঝমাঠে রাম মালিক ফিরছেন সাবিথের জায়গায়। ডেনসন, জাকির আর পঙ্কজ মৌলার সঙ্গে। বলবন্ত-উলফকে আটকাতে মোহন-কোচ ভরসা রাখছেন ইচে-রোউইলসন-প্রীতম-আইবরের উপর।
জ্বর থাকায় সুভাষ এ দিন মাঠে নেমে অনুশীলন করাননি। যুবভারতীতে চার্চিলের অনুশীলন করান কোচ মারিয়ানো ডায়াসই। পেটের গণ্ডগোলে তৃতীয় বিদেশি লাগোসকে পাচ্ছে না চার্চিল। তবে কোচি ফেড কাপে যে চতুষ্টয় ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে সেই উলফ-বলবন্ত-লেনি-শাবানা থাকছেন মাঠে। বাগানকে ওরাই তো কয়েক সপ্তাহআগে ছিটকে দিয়েছিলেন টুর্নামেন্ট থেকে। আর নিজের রক্ষণ সম্পর্কে সুভাষের মন্তব্য, “টানা সাত ম্যাচ আমরা জিতেছি। শেষটা ড্র হয়েছে। স্বদেশি রক্ষণই কিন্তু খেলছিল সব ম্যাচে।”
করিমের গলায় অবশ্য তেমন জোর নেই। ফেড কাপে ব্যর্থতার পর আই লিগের প্রথম ম্যাচে নেমেই হার। ধু ধু করছে মাঠ। যে ম্যাচটায় অঘটন ঘটলে আরও তলিয়ে যাবে ট্রফিহীন বাগান। সেই ম্যাচের আগে কোনও বড় কর্তারই দেখা নেই তাঁবুতে। সবই যেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ভবিতব্যের উপর। রোবটের মতো চলছে সব কিছু। অনুশীলন থেকে টিম মিটিং, খাওয়া-দাওয়া থেকে ফুটবলারদের যাওয়া-আসা। এই অবস্থার মধ্যেও করিম হাল ছাড়ছেন না। তাতাচ্ছেন পুরো টিমকে। কখনও রাম-পঙ্কজদের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন ‘ভেরি গুড’ বলে। কখনও ‘বয়েজ ফাইট, বয়েজ ফাইট’ বলে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছিল তাঁকে।
বৃহস্পতিবার সকালের করিমকে দেখে সত্যিই মনে হচ্ছিল সেই লাইনটা, ‘একা কুম্ভ রক্ষা করে...’।

শুক্রবারে আই লিগ

মোহনবাগান: চার্চিল ব্রাদার্স (যুবভারতী ৬-০০)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.