ক্রিকেট বিশ্বকাপ কিংবা এ বছরে ভারতের ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ক্যাপ্টেন্সি থেকে অপসারণ ঘটা উচিত বলে তিনি মনে করেন না। কিন্তু প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে হচ্ছে, বিদেশে ধোনিকে ভাল কিছু করতে হলে আরও সাহস দেখাতে হবে। টেস্টে সাহসী ক্যাপ্টেন্সি করতে হবে। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো সৌরভেরও মনে হচ্ছে, বিদেশে ঝুঁকি না নিলে কিছু হবে না। হারতে হারতেই জেতা শিখতে হবে। “ধোনির অধিনয়াকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। ভারতের কোনও অধিনায়ক বারোটা বা তেরোটা টেস্টের মধ্যে দশ-এগারোটা হেরে ক্যাপ্টেন থাকেনি। কিন্তু ভারতীয় টিমের এখন যা পরিস্থিতি তাতে ধোনির ক্যাপ্টেন্সি এখন যাওয়া উচিতই নয়। বরং ধোনিকে অধিনায়ক রেখে দেওয়াটাই ঠিক সিদ্ধান্ত হবে,” বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ‘এবিপি আনন্দ’-র এক শো-এ বলে দেন সৌরভ। তখনও অবশ্য কারও জানা ছিল না যে চোটের কারণে এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়াবেন ধোনি। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগেই একটি টিভি চ্যানেলে সৌরভ টেস্টে ধোনির ক্যাপ্টেন্সিকে ‘অবনক্সাস’ বলেছিলেন। কিন্তু এ দিন অতটা কড়া মন্তব্যের রাস্তায় না হেঁটে বলে দিলেন, “আমি শিরোনাম তৈরি করতে চাই না। কিন্তু ওকে আরও সাহস দেখাতে হবে। অধিনায়ক হিসেবে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হালফিলে ধোনির কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আমার খুব নেতিবাচক বলে মনে হয়েছে। যেমন টস জিতে বারবার ফিল্ডিং নেওয়া।”
কিন্তু বিদেশে টানা ব্যর্থতার পরেও কেন ধোনিকে অধিনায়ক রেখে দেওয়া হবে? অস্ট্রেলিয়া মাটিতে ০-৪ হার। বিলেতে ইংল্যান্ডের কাছে ০-৪-এ পর্যদুস্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা বা নিউজিল্যান্ডে গিয়েও পরিবর্তন নেই—দু’জায়গাতেই ০-১ ফলে টেস্ট সিরিজ হার। ২০১১ থেকে ২০১৪—তিন বছরের টানা বিপর্যয়ের পরও তাঁর কেন মনে হচ্ছে ধোনিকে টানা উচিত? এ বার সৌরভের উত্তর, “এটা ঠিক যে, ২০১১-র পর থেকে ধোনির ক্যাপ্টেন্সি গ্রাফ ক্রমাগত নীচের দিকে নামছে। খুব দ্রুত নামছে। কিন্তু ধোনি ভারতবর্ষের ওয়ান ডে টিমের ক্যাপ্টেন থাকবে। টেস্ট টিম থেকে ওকে বাদ এখনই দেওয়া যাবে না। আরও কয়েকটা ব্যর্থতার পর সেই প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু এখনই নয়। আর একটা বড় ব্যাপার, সামনে ইংল্যান্ড সফর আছে। অস্ট্রেলিয়া সফর আছে। দু’টো সফর মিলে ন’টা টেস্ট। যা নিউজিল্যান্ড সফরের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। যে ভাবে অস্ট্রেলিয়া খেলছে, যে গতিতে মিচেল জনসন বল করছে সেখানে অভিজ্ঞ অধিনায়ক দরকার।” এখানে না থেমে সৌরভের আরও ব্যাখ্যা, “এই দু’টো শক্ত সিরিজে নতুন কোনও ছেলেকে ক্যাপ্টেন করা হলে সেটা তার পক্ষে ঠিক হবে না।”
কিন্তু নতুন কেউ এলে এর চেয়ে কতটা আর খারাপ হবে? ০-৮-এর বদলে তো আর ০-৯ হবে না! তা হলে? “ঠিক। কিন্তু বিদেশে ন’টা টেস্টের সামনে কোনও নতুন ছেলেকে ফেলে দিলে যে ধাক্কাটা লাগবে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়তো তার সময় লেগে যাবে। আর ২০১১ বা ’১২-র শেষে ধোনিকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানোর একটা আওয়াজ উঠেছিল। বলা হয়েছিল, টেস্টে ও ব্যাটসম্যান-উইকেটকিপার হিসেবে খেলুক। তখন কিন্তু ধোনিকে রেখে দেওয়া হল যাতে ও এই ব্যাপারটা ভেঙে বেরোতে পারে। আমার মতে, সেটাই হয়তো এখন প্রযোজ্য। তাই বলছি, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সফর পর্যন্ত ধোনিকে অধিনায়ক রেখে দেওয়া উচিত। বিরাট কোহলি যোগ্য পরিবর্ত। কিন্তু সেটা বিশ্বকাপের পর। অস্ট্রেলিয়া সফরের পর।” পাশাপাশি ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক স্পষ্ট বলে দিচ্ছেন, টেস্টে হরভজন সিংহ এবং প্রজ্ঞান ওঝাকে খেলাতে হবে। কারণ— বিদেশে পেস নয়, ভারতকে ডোবাচ্ছে স্পিন। সৌরভ বলে দিচ্ছেন, “খুব অবাক লাগছে প্রজ্ঞানকে টেস্ট টিমে দেখতে না পেয়ে। ভাল উইকেটে প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু ওঝার আছে। আর হরভজন যখন বাদ পড়েছিল, তখন ওর কোনও পারফরম্যান্স ছিল না। কিন্তু এখন যখন বাকিরা পারছে না, ওকে কেন ফেরানো হচ্ছে না?” |