ধোনির শেষ, না বিরাট কোহলির শুরু? কী ভাবে ভবিষ্যৎকে দেখব আমরা? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘সাইড স্ট্রেইন’-এর জন্য এশিয়া কাপে নেই ধোনি খবরটা শুনে আমি খুব একটা অবাক হইনি। বরং অনেক দিন ধরেই আমার মনে হচ্ছিল, কী করে এত চাপ নিয়ে টেনে যাচ্ছে ছেলেটা? এ দিনের পর যে আশঙ্কা দেখা দিতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটে, তা হল: এটা অধিনায়ক ধোনির শেষের শুরু নয় তো?
ধোনিহীন টিম ইন্ডিয়া ঢাকায় কেমন খেলবে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেট এক নতুন যুগের সামনে দাঁড়িয়ে। ধোনিহীন যুগ। এশিয়া কাপটা তার কার্টেন রেইজার।
ধোনিকে ছাড়া ভারত কেমন খেলবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিরুদ্ধে, তার উপর নির্ভর করছে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। নতুন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে ‘নিউ লুক’ দল এ দেশের ক্রিকেটকে নতুন দিশা দেখাতে পারলে ভারতীয় ক্রিকেটেরই মঙ্গল। বোঝা যাবে, আমরা তা হলে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত।
নভজ্যোৎ সিংহ সিধু, সঞ্জয় মঞ্জরেকররা ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পর যেমন তাদের জায়গা ভরাট করার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল সৌরভ, রাহুলরা। গাওস্করের জায়গা যেমন নিয়ে নিয়েছিল সচিন তেন্ডুলকর, তেমন ধোনির জায়গাও যে এক দিন পূরণ হয়ে যাবে, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কিন্তু তা এই এশিয়া কাপেই কি না, সেটাই দেখার। কোহলি দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে নতুন যুগ শুরু হয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে ধোনিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
আসলে এক বছর বাদেই বিশ্বকাপ, তাই ধোনিকে ক্যাপ্টেনশিপ থেকে সরিয়ে দিয়ে দলটার ক্ষতি করার কোনও মানে হয় না। নিজের দল নিয়ে ধোনির নিশ্চয়ই একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। ধোনিকে সরিয়ে সেই পরিকল্পনা নষ্ট করে দিয়ে এই সময়ে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে গেলে উল্টো ফল হতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত এখন না নেওয়াই ভাল। কিন্তু এই একটা এশিয়া কাপ থেকেই বুঝে নেওয়া যাবে, ধোনিকে ছাড়া ভারতীয় দলের ক্ষমতা কতটা। কোহলিই বা চাপের মুখে দলকে কতটা ভাল নেতৃত্ব দিতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাবটাও হয়তো মিলবেআমরা পরবর্তী অধিনায়ক কি পেয়ে গেলাম?
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর জুলাই-অগস্টে কোহলি যে আটটা ওয়ান ডে-তে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে সাতটাতেই ভারত জিতেছে। এর মধ্যে অবশ্য পাঁচটাই জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে, একটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও একটা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে কোহলির ক্যাপ্টেনশিপ রেকর্ড কিন্তু খুব একটা খারাপ নয়। নেতৃত্বে এসে যদি কোহলি নিজের মত অনুযায়ী দল চালাতে পারে, তা হলে হয়তো পূজারাকে ও তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠাতে পারে। হয়তো অমিত মিশ্রকেও খেলাতে পারবে। সেক্ষেত্রে ভারতের পারফরম্যান্স ভাল হওয়া উচিত। তরুণ ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে তরুণ ভারতীয় দলের উজ্জীবিত ক্রিকেটও খেলা উচিত। এবং এগুলো যদি ঠিকঠাক হয়, তা হলে অবশ্যই ভারতীয় ক্রিকেটে কোহলি-যুগ শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। কিন্তু সে জন্য ধোনি ফিট হয়ে মাঠে ফিরে এলে যে তাকে রাতারাতি সিংহাসন থেকে টেনে নামিয়ে দেওয়া হবে, এমন আশা করবেন না। সেটা হয়তো ২০১৫-র বিশ্বকাপের পর হবে। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত সাফল্য না পেলে হয়তো ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব কোহলির হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেটাই বা কী খারাপ সিদ্ধান্ত হবে? |