|
|
|
|
জমি দিয়েও পাননি কলেজ, হতাশ ঝিলিঙ্গার বাসিন্দারা
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
নিজেদের এলাকায় কলেজ হবে, এই আশায় বুক বেঁধে জমি দিয়েছিলেন খড়্গপুর ২ ব্লকের ঝিলিঙ্গার ৯৪টি জমিদাতা পরিবার। সরকারের তরফে সেই জমি অধিগ্রহণ পর্বও মিটেছিল। কিন্তু, ঝিলিঙ্গার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ এই ‘অজুহাতে’ সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ওই জায়গায় কলেজ গড়ার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে। বদলে প্রশাসনের প্রস্তাব ওই ব্লকেরই মাদপুরের আম্বিগেড়িয়ায় নতুন কলেজ তৈরি করা হোক। এই টালবাহানায় জমি অধিগ্রহণের পর কেটে গিয়েছে প্রায় সাত মাস। এখন জমি দিয়েও কলেজ না হওয়ায় চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের এখন দাবি, কলেজ না হলে অধিগৃহিত জমি ফিরিয়ে দিক প্রশাসন।
নতুন সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যে প্রতি ব্লকে একটি করে সাধারণ কলেজ করা হবে। ওই ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে ২০১২-র শেষ দিকে ঝিলিঙ্গাবাসী নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে কলেজ করা নিয়ে প্রস্তাব দেয়। বাসিন্দাদের যুক্তি ছিল, তাঁদের এলাকা থেকে সবচেয়ে কাছের কলেজও ২৫ কিলোমিটার দূরে খড়্গপুরে। প্রস্তাব মতো ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পলশা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিলিঙ্গার প্রস্তাবিত কলেজ এলাকা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসন ও রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। মেলে কলেজ তৈরির অনুমতিও। সেই মত সরকারের তরফে কারা জমি দিতে ইচ্ছুক তা জানতে চাওয়া হয়। প্রথমে কিছু সমস্যা হলেও পরে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে, কলেজের আশায় জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে কিছু জমিদাতা। ৩০ অগস্ট এলাকার প্রায় ৯৪ জন জমিদাতা মোট ৮ একর ৭৬ ডেসিমেল জমি কলেজের জন্য দান করে হলফনামা দাখিল করেন।
এই পরিস্থিতিতে জমি দিয়েও কলেজ না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে ওই কলেজের আশায় থাকা গ্রামবাসীর। জমিদাতা কৃষ্ণেন্দু বেরা, গোবিন্দ জানাদের কথায়, “আমাদের এলাকা উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে না! এই ভাবনা থেকে নিজেদের জমি কোনও শর্ত ছাড়া দান করেছিলাম। সরকারি নির্দেশে হলফনামাও জমা করেছি। এখন জমি পড়ে রয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঝিলিঙ্গা এলাকায় কলেজ গড়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিল স্থানীয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই। তবে এলাকার অনেকেরই দাবি, ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের দলের পরিষদীয় নেতা অজিত মাইতির বাড়ি মাদপুর এলাকায়। তাই তিনিই ওই কলেজ মাদপুরে গড়ার জন্য তদ্বির করেছেন। যদিও অজিত মাইতি নিজে বলছেন, “সরকার ওই কলেজ বাতিল করেছে। এতে আমার কিছু করার বা প্রভাবিত করার কোনও জায়গা নেই।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কিছু সিপিএমের লোক এটিকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। তবে যাঁরা ঝিলিঙ্গায় জমি দিয়েছিলেন, আমি তাঁদের পাশে আছি।” তাঁর প্রস্তাব, “গ্রামের ভিতরে ওই জমিতে কোনও পশু চিকিৎসালয় গড়ার জন্য আমি সরকারকে প্রস্তাব দেব।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্ত জানান, “গ্রামে যোগাযোগের অভাব থাকায় ঝিলিঙ্গায় কলেজের প্রস্তাব বাতিল হয়েছে। মাদপুরে সমবায়ের জমি সরকারকে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই কলেজ হবে।” তাঁর অশ্বাস, “ঝিলিঙ্গার জমিদাতাদের জমি ফেরানোর চিন্তাভাবনা চলছে।”
এই পরিস্থিতিতে জমির ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে জমিদাতা পরিবারগুলি। |
|
|
|
|
|