যে শহরে এত দিন বেআইনি বহুতল বানানোটাই ছিল কার্যত ‘আইন’, এ বার সেই হাওড়াতেই একটি বহুতলকে বেআইনি ঘোষণা করে আট সপ্তাহে সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার হাওড়া পুরসভা ও পুলিশকে এই নির্দেশ দেন বিচারপতি সৌমিত্র পাল।
আদালত সূত্রে খবর, সালকিয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেনে ১২ ফুট রাস্তা দখল করে ওই বহুতলটি গড়া হয়। সেটি তৈরির সময়েও নক্শার বিচ্যুতি হয়েছিল বলে অভিযোগ। রাস্তার উপরে বাড়ি তোলার জন্য বহু মানুষ অসুবিধায় পড়েছিলেন।
২০১৩-র গোড়ার দিকে ভোলানাথ বসু নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে জানান, ১৪ নম্বর খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেনের ওই চারতলা বাড়িটি সম্পূর্ণ বেআইনি। ওই বহুতলের প্রোমোটার বাসুদেব রাম ও দেবাশিস মুখোপাধ্যায় (ভিক্টর) এমন অনেক ফ্ল্যাট বিক্রিও করেছেন, যেগুলি কোনও ভাবেই আইনসম্মত নয়।
বৃহস্পতিবার আবেদনকারীর আইনজীবী হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৯৮০ সালে তৈরি হাওড়া পুরসভা আইনে বলা আছে, কোনও বাড়ির নির্মাণ বন্ধ করতে বলা হলেই তা করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হাওড়া পুরসভা ও পুলিশকে জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি।” |
বিচারপতি জানান, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ওই নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি। পুরসভা ও পুলিশকে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ওই নির্মাণ ভেঙে দিতে হবে। ২০১৩-র শেষ দিক পর্যন্ত হাওড়া পুরবোর্ড বামফ্রন্টের দখলে ছিল। অভিযোগ, দীর্ঘ ৩২ বছরেরও বেশি সময়কালে বারবারই বিরোধীরা বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, উত্তর হাওড়া থেকে দক্ষিণ হাওড়ায় বেআইনি প্রোমোটাররাজ চললেও পুরসভা নীরব থেকেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাস্তা দখল করে বাড়ি তৈরি হলেও তত্কালীন কাউন্সিলরের নজরে আসেনি কি?
১২ নম্বর ওয়ার্ডের তত্কালীন সিপিএমের কাউন্সিলর গৌতম রায় বলেন, “এই ধরনের বেআইনি বাড়ি তৈরির কথা জানি না। আমার নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে প্রোমোটারদের নাম শুনেছি।” আর হাওড়ার বর্তমান মেয়র তৃণমূলের রথীন চক্রবর্তী বলেন, “মহামান্য আদালতের নির্দেশ মানা আমাদের কাজ। বাড়ি ভাঙার নির্দেশ হাতে এলেই সব রকমের ব্যবস্থা নেব।” |