তৃণমূল পরিচালিত উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদত্যাগ করলেন এই পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদের পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত সদস্য শেখ সেলিম। বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠান মহকুমাশাসক এবং পুরপ্রধানের কাছে। তবে, তিনি যে কোন দলে ছিলেন তা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
শেখ সেলিম বলেন, ‘‘পুরসভায় লাগামছাড়া দুর্নীতি হচ্ছে। আমাকে না জানিয়ে ঠিকাদারদের কাজের বরাত দেওয়া হচ্ছে। যে সব ঠিকাদার কাজ করেননি তাঁদের বিল মেটানো হচ্ছে। বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমাকে না জানিয়েই যদি সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দুর্নীতি যদি চলতেই থাকে, তা-হলে আর আমার এই পদে থেকে লাভ কী?’’ গত ২১ জানুয়ারি দুর্নীতি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন জানিয়ে শেখ সেলিম বলেন, “ওই চিঠি পাঠানোর পরেও কোনও প্রতিকার হয়নি। তাই মহকুমাশাসক ও পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিই।’’
পুরপ্রধান তৃণমূলের দেবদাস ঘোষ গুরুতব অসুস্থ থাকায় এ নিয়ে কোনও কথা বলতে পারেননি। ওই দলের তরফে পুরসভা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় দাবি করেন, “আমাদের হাতে পুরসভার ক্ষমতা আসার পরে কোনও দুর্নীতি হয়নি। সেলিম এ ব্যাপারে আমাদের দলীয় নেতৃত্বের কারও কাছে কোনও লিখিত অভিযোগও জমা দেননি।’’
২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে জোট করে নির্বাচনে লড়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জেতেন সেলিম। ২৯ সদস্যের পুরসভায় কংগ্রেস এবং তৃণমূল ১১টি করে আসন পায়। চেয়ারম্যান পদ কে পাবে তা নিয়ে বিবাদ বাধে দু’পক্ষের। ভোটাভুটিতে জিতে যান কংগ্রেসের সাইদুর রহমান। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় ছিলেন বছরখানেক। সেলিম কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় সাইদুরকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। সাইদুরের বিরুদ্ধে তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন সেলিম। নতুন চেয়ারম্যান হন দেবদাস ঘোষ। তাঁকেও ভোট দেন সেলিম। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুলেশ্বরের জনসভায় ওই দলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সেলিম। দেবদাসবাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পরে সেলিমকে দেওয়া হয় পূর্ত দফতর।
পদত্যাগপত্র পাঠানোর পরে এ দিন সেলিম বলেন, ‘‘আমি কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছিলাম, কংগ্রেসেই রয়েছি। সিপিএম ও বিজেপির সাহায্য নিয়ে ২০১০ সালে কংগ্রেস বোর্ড গঠন করেছিল। তা আমি মানতে পারিনি। পরে জোট ধর্ম মেনে আমি তৃণমূলকে সমর্থন দিই। তারা বোর্ড গঠন করে।’’ সিপিএম এবং বিজেপি-র সাহায্য নিয়ে বোর্ড গঠনের কথা উড়িয়ে দিয়ে সাইদুর বলেন, ‘‘সেলিম সুবিধাবাদী। তিনি দলকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন। ভেবেছিলেন তৃণমূলে গিয়ে দুর্নীতির ভাগ পাবেন, তা না-হওয়াতেই ফের রঙ পাল্টাচ্ছেন।’’ এ প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “দেরিতে হলেও তাঁর যে ভুল ভেঙেছে সেটা ভাল লক্ষণ। তৃণমূলে যাঁরা চলে গিয়েছেন তাঁদের সকলেরই মোহভঙ্গ হবে।’’ সেলিম তাঁদের দলের সদস্য কিনা তা নিয়ে পুলকবাবু বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে সেলিম কংগ্রেসের টিকিটেই জেতেন। পরে আরও কয়েক জন কাউন্সিলরের সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেন। তবে বর্তমানে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়টি কী তা তিনিই বলতে পারবেন।’’
তৃণমূল শাসিত এই পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। পুরসভার এক শ্রেণির কর্তাদের সঙ্গে ঠিকাদারদের একাংশের অশুভ আঁতাত এবং দুর্নীতি, স্বজন-পোষণের অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। সাংসদ সুলতান আহমেদ, উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি এবং পুলকবাবুকে সে নিয়ে হস্তক্ষেপও করতে হয়েছে। |