হোটেলদের সতর্ক করতে বৈঠক করবে থানা
ত্তপুকুরের কিশোরী উদ্ধার-পর্বের জেরে গাদিয়াড়ায় হোটেলে দেহ ব্যবসা ঠেকাতে নড়েচড়ে বসছে হাওড়ার শ্যামপুর থানার পুলিশ। এলাকার মোট ১৬টি বেসরকারি হোটেল-লজের ১৩টিতে এখন তালা ঝুলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকে ডেকে স্থানীয় হোটেল মালিকদের ‘হোটেলে কী করবেন, কী করবেন না’র পাঠ দিতে চাইছে থানা। নিয়ম ভাঙলে কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারিও ওই বৈঠকে দেওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। তা ছাড়া, গাদিয়াড়ায় একটি ‘আউটপোস্ট’ খুলতে চেয়ে জেলা পুলিশের কাছে প্রস্তাবও পাঠাচ্ছে শ্যামপুর থানা।
তবে এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ এখনও বলছেন, “স্থানীয় থানার নজর এড়িয়ে গাদিয়াড়ার হোটেলে দেহ ব্যবসার রমরমা হওয়াটা কি আদৌ সম্ভব? সেই থানার পুলিশ আবার কী ব্যবস্থা নেবে?”
শ্যামপুর থানা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চায়নি। মন্তব্য করেননি হাওড়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনাও। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “বিতর্কিত হোটেলগুলি শ্যামপুর থানার মদতে খুলেছে, এমন বলা উচিত হবে না। তবে নজরদারিতে যে গাফিলতি হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই জন্যই এখন কড়াকড়ি বাড়ানো হচ্ছে।”
হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুখেন্দু হীরার বক্তব্য, “কারা হোটেলে আসছেন-যাচ্ছেন, তার বাধ্যতামূলক খতিয়ান রাখতে হবে হোটেল কর্তৃপক্ষকে। যাঁকে ঘর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, তাঁর বৈধ পরিচয়পত্রের ফটো-কপি এবং মোবাইল নম্বর রাখতে হবে। কোনও বোর্ডারকে নিয়ে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিতে হবে স্থানীয় থানায়। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, হোটেল-লজে নির্দিষ্ট আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করবে পুলিশ। নিয়ম ভাঙলে হোটেল মালিককে গ্রেফতার করে, তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হতে পারে।
একটা সময় ছিল, এক-দু’দিনের ছুটিতে কলকাতা বা আশপাশের জেলা থেকে অনেকেই যেতেন রূপনারায়ণ এবং হুগলি নদীর সঙ্গমে গড়ে ওঠা গাদিয়াড়ায়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকাঠামোর দুর্বলতায় ধুঁকছে গাদিয়াড়া। তাঁদের কথায়, “রাস্তায় আলো নেই। নদীর পাড় ভাঙছে। বিকেল ৪টের পরে কলকাতায় ফেরার বাস নেই। একাধিক হোটেলে পরিষেবা পদের নয়। লোকে আসবে কেন?” তাঁদের দাবি, এই সুযোগেই এলাকায় আনাগোনা শুরু হয় উটকো লোকের। রমরমা হয় দেহ ব্যবসার।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময় গাদিয়াড়ার কিছু-কিছু হোটেলে দেহ ব্যবসায় ব্যবহারের জন্য রাখা হতে থাকে বহিরাগত মেয়েদের। বছর দু’য়েক আগে তা নিয়ে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে হোটেল মালিকদের একাংশের বিবাদের জেরে হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে। বন্ধ হয় বেশ কিছু হোটেল। সেই বিতর্কিত হোটেলগুলির কয়েকটি গত চার-পাঁচ মাসে ফের খুলেছে। শ্যামপুর থানার নজর এড়িয়ে আদৌ হোটেল খোলা সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে।
সরকারি ‘রূপনারায়ণ লজ’ বাদে তিনটি হোটেল এখনও চলছে গাদিয়াড়ায়। ওই হোটেলগুলির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে গাদিয়াড়াকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে চাঙ্গা করা হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। এক হোটেল মালিকের কথায়, “পরিকাঠামোর উন্নয়ন হলে পরিবার-আত্মীয় নিয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক এখানে আসবেন। ওই ধরনের পর্যটক বেশি এলে অসাধু ব্যবসা কমতে বাধ্য।”
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর আশ্বাস, গাদিয়াড়ার পর্যটন পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “গাদিয়াড়ার পর্যটন পরিকাঠামোর ঘাটতি মেটাতে জেলা পরিষদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি নেওয়া হবে। তবে ওখানকার আইন-শৃঙ্খলার দিকটি পুলিশকেই নিশ্চিত করতে হবে।”

গাদিয়াড়া কাণ্ডে ধৃত আরও এক
দত্তপুকুরের কিশোরীকে গাদিয়াড়ার হোটেলে বিক্রির অভিযোগে আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার গভীর রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না এলাকা থেকে মিলন দাস নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়। পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় অপরাধের কথা কবুল করে জানিয়েছে, সে হোটেলে ‘লিজে’ মেয়ে পাঠাত। দত্তপুকুরের নাবালিকাকে সে ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে সোনাগাছি থেকে কেনে। গাড়িয়াড়ার হোটেলে দিনপ্রতি ১৫০০ টাকায় ‘লিজ’ দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়। তাকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে সম্প্রতি ওই কিশোরীকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে যায় তার জামাইবাবু। পর পর তিন দিন তাকে ধর্ষণ করার পরে বিক্রি করে দেয় এক বন্ধুকে। সেই বন্ধুও মেয়েটটির উপরে নির্যাতন চালিয়ে বিক্রি করে দেয় সোনাগাছিতে। ফের হাতবদল হয়ে কিশোরীর স্থান হয় গাদিয়াড়ার এক হোটেলে। সেখানে তিন দিন নানা ‘খদ্দের’ ধর্ষণ করে বছর তেরো-চোদ্দোর ওই মেয়েটিকে। দিন কয়েক আগে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মেয়েটির জামাইবাবু-সহ পাঁচ জনকে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.