|
|
|
|
সংসদের ভিতরে-বাইরে প্রভাব বিস্তারে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২০ ফেব্রুয়ারি |
অণ্ণা হজারের সমর্থন পাওয়ার পর জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের উপস্থিতি জাহির করতে সক্রিয় হয়ে উঠল তৃণমূল।
আজ এক দিকে রাজ্যসভায় তেলঙ্গানা বিল পাশের সময় বিরোধিতায় সবাইকে ছাপিয়ে গেল তৃণমূল। তেলঙ্গানা বিল পাশ অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং সঠিক নয় বলে লাগাতার গলা ফাটালেন দলের সাংসদরা। অন্য দিকে, লোকসভা ভোটে লড়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চালালেন মুকুল রায়।
সর্বভারতীয় প্রচারের লক্ষ্যে অণ্ণার পাশাপাশি জামা মসজিদের শাহি ইমামের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে তৃণমূল। দেশে সংখ্যালঘুদের হালহকিকত নিয়ে একটি সর্বভারতীয় সম্মেলন করতে চলেছেন শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মমতার কথা হয়েছে। বুখারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য তারা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে। সে কথা জানিয়ে বুখারিকে চিঠি লিখেছেন মমতা। বুখারি চাইছেন, তৃণমূলের কোনও শীর্ষনেতা ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকুন।
দু’দিন আগে দিল্লিতে পৌঁছেই লোকসভায় যে ভাবে তেলঙ্গানা বিল পাশ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। দলের রাজ্যসভার সাংসদদের তিনি নির্দেশ দেন, সেখানে বিলটি এলে প্রতিবাদ জানাতে। লোকসভায় তেলঙ্গানা বিল পাশের প্রক্রিয়া পুরোপুরি অসাংবিধানিক বলে প্রশ্ন তুলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন দলের মুখ্যসচেক ডেরেক ও’ব্রায়েন। আজ যত বারই বিল পাশ করানোর চেষ্টা হয়েছে, তত বারই সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতারা। অন্ধ্রপ্রদেশ বিভাজনের বিরোধিতা করছে সিপিএম-ও। কিন্তু সীতারাম ইয়েচুরি, তপন সেনদের আজ ছাপিয়ে যান তৃণমূল সাংসদরা। সন্ধ্যায় যখন বিল পাশ হচ্ছে, তখন সীমান্ধ্রের সাংসদরা হাল ছেড়ে দিলেও ডেরেকের নেতৃত্বে সুখেন্দুশেখর রায়, নাদিমুল হক, বিবেক গুপ্ত, সৃঞ্জয় বসুরা প্রতিবাদ জানিয়ে গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অরুণ জেটলি, যে যখন বলতে উঠেছেন, তাঁরই সামনে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূল নেতারা। বিলটিও ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে উড়িয়ে দেন তাঁরা। তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, এই প্রতিবাদের সঙ্গে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবির কোনও সম্পর্ক নেই। মনমোহন-সরকার যে ভাবে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় একটি রাজ্য বিভাজনের পথে হাঁটল, তারই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।
সংসদের মধ্যে নিজেদের উপস্থিতি জাহিরের পাশাপাশি দেশ জুড়ে তৃণমূলের ঘাসফুল ফোটানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে। গত কালই মমতা জানিয়েছিলেন, উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে তৃণমূল। আর আজই দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে সংগঠন তৈরি ও প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দায়িত্ব বণ্টন হয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে গুজরাত, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল ও কর্নাটকে প্রার্থী দেবে তৃণমূল। অণ্ণা-মমতার যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের পরই দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। আজ দুপুরের বিমানে কলকাতা রওনা হয়ে যান মমতা। তার আগে তিনিও অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় পরে বলেন, “ব্রিগেডের জনসভাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তৃণমূল এ বার ভোটে গোটা দেশে লড়বে। অণ্ণা তাঁর আশীর্বাদ দিয়েছেন। তিনি তৃণমূলের হয়ে প্রচার করবেন বলেও জানিয়েছেন। এর একটা প্রভাব পড়েছে। ফলে সারা দেশ থেকে মানুষ আমাদের দলে যোগ দিতে চাইছেন, প্রার্থী হতে চাইছেন।”
মুকুলবাবু জানান, প্রাক্তন আইএএস অরুণ ভাটনগরকে মধ্যপ্রদেশে দলের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভাটনগর সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সচিব পদে কাজ করেছেন। প্রসারভারতীর চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। দিল্লির জেলা আদালতের প্রাক্তন বিচারক এস এন গুপ্তও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক মঙ্গারাম ভরদ্বাজের সঙ্গেও মুকুলবাবুর কথা হয়। এই দু’জনকে দিল্লির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। মুকুলবাবু বলেন, “প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠির নাতনি ইন্দিরা তিওয়ারিও বেনারস থেকে যোগাযোগ করেছেন। তিনিও দিল্লিতে আসছেন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে।” এ ছাড়া শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ‘উওমেন্স ফেডারেশন ফর ওর্য়াল্ড পিস’-এর মতো বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন প্রস্তাব নিয়েছে, তাদের সদস্য-সমর্থকরা লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থন করবেন।
পশ্চিমবঙ্গের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে আগেই উত্তর-পূর্বে পা রেখেছে তৃণমূল। ২৫ মার্চ আগরতলায় ও ২৬ মার্চ গুয়াহাটিতে জনসভা করবেন তৃণমূলনেত্রী। এর পর ইম্ফলে তৃণমূলের জনসভা হবে। কেরল, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ থেকেও অনুরোধ আসছে, মমতা যাতে প্রচারে যান। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার জন্যও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। মুকুলবাবু বলেন, “আমরা যেখানে যেখানে ভাল প্রার্থী পাব, সেখানেই প্রার্থী দেব।” |
|
|
|
|
|