|
|
|
|
রাজীবের তিন খুনির মুক্তিতে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২০ ফেব্রুয়ারি |
ভোটের মুখে গত কাল রাজীব গাঁধীর সাত হত্যাকারীকেই মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বড় চমক দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্রের আপত্তিতে ওই সাত জনের তিন জন মুরুগন, শান্তন ও পেরারিবালনের মুক্তির সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট।
১৮ তারিখে সর্বোচ্চ আদালত এই তিন জনের মৃত্যুদণ্ড রদ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। জয়ললিতা সরকারের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ চেয়ে কেন্দ্রের আর্জিতেও এই তিন জনেরই নাম ছিল। প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, কেন্দ্র চাইলে বাকি চার জন অর্থাৎ নলিনী, রবার্ট পায়াস, জয়কুমার ও রবিচন্দ্রনের মুক্তির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আলাদা আবেদন করতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্ট যে হেতু তামিলনাড়ু সরকারের এই সিদ্ধান্তের পদ্ধতিগত দিকটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে গোটা বিষয়টিই খতিয়ে দেখার কথা বলেছে, তাই সাত জনের মুক্তির ক্ষেত্রেই আপাতত ওই স্থগিতাদেশ কার্যকর হল বলে মনে করা হচ্ছে। ৬ মার্চ পরবর্তী শুনানি।
সলিসিটর জেনারেল মোহন পরাশরন আজ সুপ্রিম কোর্টে বলেন, তিন খুনির মৃত্যুদণ্ড রদের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। তার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মুক্তির সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। তিনি এ-ও দাবি করেন যে, তামিলনাড়ু সরকার সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া না মেনেই অপরাধীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং তারা যে হেতু কেন্দ্রীয় আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল, তাই রাজ্য তাদের মুক্তি দিতে পারে না।
সরকারের বক্তব্য শুনে বেঞ্চ জানায়, অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের অধিকারকে আদালত খাটো করছে না। কিন্তু কারও ফাঁসি রদ করে যাবজ্জীবনের নির্দেশ দেওয়া মানেই তাকে মুক্তি দেওয়া নয়। কতগুলি পদ্ধতিগত দিক রয়েছে। তামিলনাড়ু সরকার সেগুলি পালন করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিচারপতিরা জানান, কারও সাজা মকুবের আগে কোনও নির্দিষ্ট আদালতের বিচারকের কাছে আবেদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বস্তুত, যে দ্রুততায় জয়ললিতা সরকার রাজীব-হত্যাকারীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতিরা।
জয়ললিতার সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কালই ক্ষোভ জানিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বলেছিলেন, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারীদের যদি মুক্তি দেওয়া হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কী বিচার আশা করবেন? বস্তুত, রাহুল বিবৃতি দেওয়ার আগেই দেশের নানা প্রান্তে অনেকেই জনপ্রিয়তার রাজনীতি করার অভিযোগে বিঁধেছিলেন জয়ললিতাকে। কেউ কেউ বলেছিলেন, রাজীবের হত্যাকারীরা ২২ বছর ধরে জেল খেটেছে, ১৬ বছর ধরে তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এই সমস্ত যুক্তিতে তাদের অপরাধ কিন্তু লঘু হয়ে যায় না। আইনজ্ঞদের অনেকেও বলেছিলেন, রাজীবের খুনিদের মুক্তির বিরোধিতা করে কেউ আদালতে গেলেই জয়ললিতার সিদ্ধান্ত মুখ
থুবড়ে পড়বে। আজ হলও ঠিক তাই। সবার আগে আদালতের দ্বারস্থ হল মনমোহন সরকারই।
আদালতে আবেদন জানানোর আগে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। তার পর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, “তামিলনাড়ু সরকারের সিদ্ধান্ত কতগুলি মৌলিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর
হত্যাকারীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত নয়। তাই এ বিষয়ে এগোনো ঠিক হবে না। হত্যাকারীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত বিচারব্যবস্থার মূল শর্তের পরিপন্থী। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দলেরই নরম মনোভাব নেওয়া ঠিক নয়।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রের অবস্থান ও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিলিপি আজ তামিলনাড়ু সরকারের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিজেপিও আজ জয়ললিতা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। নরেন্দ্র মোদী ফোনে অরুণ জেটলিকে বলেন, জয়ললিতার সঙ্গে ভোট-পরবর্তী সমীকরণের কথা ভেবে সর্বভারতীয় দল হিসেবে বিজেপির এমন একটি বিষয়ে গা বাঁচিয়ে থাকা উচিত নয়। তার পরে কতকটা মনমোহনের সুরেই জেটলি বলেন, “তামিল আবেগের সঙ্গে সন্ত্রাসকে মিলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।” প্রশ্ন হল, লোকসভা ভোটের আগে তামিল আবেগ টানতে জয়ললিতা যখন এমন জনপ্রিয় রাজনীতির পথে হাঁটলেন, তখন কংগ্রেস কঠোর অবস্থান নিল কেন? রাহুলের রাজনীতিই বা কী? এর পর দ্রাবিড় ভূমিতে কংগ্রেসের পায়ের তলায় জমি থাকবে কি?
জবাবে কেন্দ্রের এক শীর্ষ সারির মন্ত্রী বলেন, “এটা রাজনীতির বিষয়ই হতে পারে না। কংগ্রেস কেন্দ্রে শাসক দল। এই ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন পপুলিজম কেন্দ্র চোখ বুজে সহ্য করলে একটা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত থেকে যাবে। দেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ জন্য কংগ্রেসকে ক্ষমা করবে না।” ওই মন্ত্রীর মতে, এই কড়া অবস্থানের জন্য তামিল ভাষাভাষীদের একাংশের কাছে কংগ্রেসের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। কিন্তু তামিলনাড়ুতে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের শক্তিই বা কী? তুলনায় জয়ললিতার এই জনপ্রিয়তার রাজনীতিতে দেশের বহু মানুষ অখুশি এবং ক্ষুব্ধ। কংগ্রেসের সমর্থক নন, এমন বহু মানুষ রাজীব গাঁধী হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজও দুঃখিত। জয়ললিতার ওই পদক্ষেপ রাজীব প্রশ্নে কংগ্রেসের সহানুভূতি পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিল বলে মনে করছেন তিনি। যদিও এডিএমকে-র এক সাংসদের যুক্তি, এর পরে জয়ললিতাও বলতে পারবেন, রাজীব-হত্যাকারীদের তিনি ক্ষমা করতে চাইলেও কংগ্রেস চায়নি।
কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতি আর আবেগের দড়ি টানাটানির এই আবহে আজ একটি বিবৃতি দিয়েছেন রাজীবের অন্যতম হত্যাকারী পেরারিবালনের বোন জি আরুসেলভি। তাতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আইনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে। দয়া করে আইনকে তার পথে চলতে দিন। আমাদের দুর্ভাগ্য নিয়ে রাজনীতি করবেন না, এটাই আমাদের আর্জি।’ |
|
|
|
|
|