শহর জুড়ে যখন ঘটা করে পালন হচ্ছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ, তারই মধ্যে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালিয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। আহত আরও দুই। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে টালা ব্রিজে। মৃতের নাম অভিষেক সামন্ত (২৫)। বাড়ি পাইকপাড়ায়। পুলিশ জানায়, ট্রাফিক নিয়ম ভেঙে দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অন্য দিকে, ওই রাতেই একটি পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে জেমস লং সরণিতে জখম হন আরও এক বাইক চালক। দুই ক্ষেত্রেই মোটরবাইক আরোহীদের মাথায় হেলমেট ছিল না বলে পুলিশের অভিযোগ।
ঘটনাচক্রে চলতি সপ্তাহটি ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ হিসেবে পালন করছে পুলিশ। সচেতনতা প্রসারে চলছে নানা অনুষ্ঠান। লালবাজারের এই সব অনুষ্ঠান আদৌ সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারছে কি না, বুধবার রাতে টালা ব্রিজের ঘটনা সেই প্রশ্নই তুলে দিল।
পুলিশ জানায়, রাত পৌনে বারোটা নাগাদ দুই বন্ধু বাবুয়া সাহা এবং সঞ্জয় দাসকে নিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে চিত্পুর থেকে শ্যামবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন অভিষেক। টালা ব্রিজের উপরে একটি লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে মোটরবাইক ও লরির সংঘর্ষ হয়। দুই বন্ধুর অল্পবিস্তর চোট লাগলেও গুরুতর জখম হন অভিষেক। তিন জনকেই প্রথমে আরজিকরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবুয়া ও সঞ্জয়কে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও অভিষেককে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার জেমস লং সরণি ও সন্তোষ রায় রোডের সংযোগস্থলে বাইক দুর্ঘটনায় আহতের নাম সুরজিত্ হালদার। তিনি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ওই থানা এলাকাতেই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ একটি পণ্যবাহী গাড়ির পিছনের চাকা খুলে গিয়ে শঙ্কর মণ্ডল নামে এক রিকশাচালকের গায়ে লাগে। আহত চালককে চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিনই গড়িয়াহাট থানা এলাকায় বেসরকারি একটি বাসের ধাক্কায় সঙ্গীতা রায় নামে এক পথচারী আহত হন। তিনিও হাসপাতালে ভর্তি। তিনটি ক্ষেত্রেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত চালকদের।
গত সোমবারই পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলকাতার পুুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থ জানিয়েছিলেন, শহরে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে। পুলিশের পাশাপাশি এ জন্য নাগরিকদের সচেতনতাকেও কৃতিত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শহরের পরিচিত চিত্র বলছে, পুলিশকর্তাদের এই দাবি সত্ত্বেও জনমানসে পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা সে ভাবে বাড়েনি। বিশেষ করে, মোটরবাইক চালকদের মধ্যে আইন মানার বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। শুধু সাধারণ জনগণই নয়, খোদ পুলিশকর্মীদেরও অনেক সময়ে হেলমেটবিহীন ও অতিরিক্ত সওয়ারি নিয়ে মোটরবাইক চালাতে দেখা যায়।
পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, দিনের বেলা রাস্তাঘাটে পুলিশি নজরদারি যতটা থাকে, রাতে ততটা থাকে না। ফলে রাতে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বেপরোয়া মোটরবাইকের দাপট বাড়ে। বুধবার রাতেও সেই নজরদারির ফাঁক গলেই অভিষেকরা মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন বলে পুলিশের ওই অংশ মনে করছে। যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক নজরদারির ফাঁকের কথা স্বীকার করতে চাননি। তিনি বলেন, “বেপরোয়া মোটরবাইক ও গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত তল্লাশি চলে। তাতে সাফল্যও মিলেছে।”
লালবাজারের আর এক কর্তা বলছেন, “মোটরবাইক চালকেরা বেশির ভাগই নতুন প্রজন্মের। তাঁদের আরও বেশি সচেতন করার চেষ্টা চালাতে হবে। বস্তুত নতুন প্রজন্মকে পথ নিরাপত্তায় সচেতন করতে স্কুলে স্কুলে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল কলকাতা পুলিশ। সেই প্রতিযোগিতার বিজয়ী অংশু হরিকুমার নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বুধবারই ‘এক দিনের ডিসি (ট্রাফিক)’ হিসেবে সম্মান দিয়েছিল লালবাজার। বুধবার রাতের দুর্ঘটনা নিয়ে এ দিন কী জানিয়েছে সে?
অংশুর উত্তর, “রাস্তাঘাটে ট্রাফিকের সব অফিসারকে আরও নজর বাড়াতে হবে। গাড়ি নিয়ম ভাঙলে জরিমানা করা উচিত। প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাজেয়াপ্ত করা উচিত।” |