বন্যায় গ্রামের নিচু জায়গার ভিটে-মাটি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে গ্রামের উঁচু জায়গায় নতুন ভাবে বসতবাড়ি গড়তে শুরু করেন। তবে ২০০০ সালের ওই বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাড়ির জায়গা দীর্ঘদিন থেকে ফাঁকা পড়ে ছিল। গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল গড়ে তোলার জন্য সেই জায়গা স্বেচ্ছায় দান করেছেন মাড়গ্রাম থানার পাইকপাড়া গ্রামের দুই ভাই সামসুল আলম এবং নুরেল আলম। দুই ভাইয়ের দান করা মোট ২১ শতক জায়গায় গড়ে উঠবে ওই স্কুল। দান করা ওই জায়গায় বৃহস্পতিবার স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের শিলান্যাস করলেন রামপুরহাট পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক আবুল হাসান। তিনি বলেন, “এক বছর আগে স্কুলটির অনুমোদন মিলেছিল। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে এই জুনিয়র স্কুলটি চলছে। সম্প্রতি ভবন নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা অনুমোদন হয়।” প্রৌঢ় সামসুল আলম বলেন, “গ্রামে ঢোকার রাস্তা ছিল না। বাবা-কাকা’রা রাস্তা তৈরির জন্য জমি দান করেছেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটি যে জায়গায় গড়ে উঠেছে, সেই জায়গাও বাবা-কাকাদের দেওয়া। বাবা-কাকারা তো প্রাথমিক স্কুলের জন্য জায়গা দিয়েছিলেন। আমরাই বা কেন ভাল কাজের জন্য জায়গা দিতে পারব না।”
আর এক ভাই নুরেল আলম বললেন, “গ্রাম থেকে সাহাপুর হাইস্কুলের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। স্কুল যাওয়ার পথে একটি কাঁদর পড়ে। তা ছাড়া আগে গ্রামের রাস্তা দুর্গম ছিল। সাইকেল চালানো তো দূরের কথা হাঁটার রাস্তাও ছিল না। মাঠের আলপথ ডিঙিয়ে, কাঁদর পেরিয়ে আমরা মাধ্যমিক পাশ করেছি ৫ কিমি দূরের স্কুল থেকে। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা ওখানে পড়ছে। কিন্তু অনেক দিন থেকেই আমরা আমাদের গ্রামের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য গ্রামের ভিতরে হাইস্কুল কিংবা জুনিয়র হাইস্কুল তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছি। শেষ পর্যন্ত জুনিয়র হাইস্কুলের অনুমোদন মেলে। স্কুল গড়তে জায়গার প্রয়োজন ছিল। তাই দিয়েছি।” এ দিন শিলান্যাসের অনুষ্ঠান ঘিরে শুধু পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেনই না, সংলগ্ন নুরুদ্দিপুর, বাটি, বাতিনা গ্রামের বাসিন্দারাও উপস্থিত ছিলেন। পাইকপাড়া গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল হওয়া মানে তাদের গ্রামেরও ছেলে-মেয়েরা কছে স্কুল হওয়ার সুবিধাও পাবে। গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিল ২৭ জন পড়ুয়া। এ বছর ২১ জন। মোট ৪৮ জন পড়ুয়ার জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এখন স্কুল চালাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরও শিক্ষক মিলবে বলে আশ্বাস শিক্ষা দফতরের। |