পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে নানা দল থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছে তাদের দলে। তাতে দল আড়েবহরে যেমন বেড়েছে, তেমনই নানা সমস্যা মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভবনাও তৈরি হয়েছে। এক দিকে, সেই সমস্যা যাতে তৈরি না হয় তার ব্যবস্থা করা, অন্য দিকে আসন্ন লোকসভা ভোটে দলের রণকৌশল নতুন আসা নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে দেওয়া এই দুই লক্ষ্যে জেলায় প্রস্তুতি সভা ও বৈঠক শুরু করল তৃণমূল। সম্প্রতি কালনা ও পূর্বস্থলীতে এ রকম দু’টি কর্মিসভা করেন দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ।
গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে জেলার নানা পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে আসে। দলের টিকিট না পেয়ে নানা জায়গায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী। তবে পঞ্চায়েত ভোটে জেলা জুড়ে তৃণমূলের সাফল্যের পর থেকেই কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামেদের বহু কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিরা দল পাল্টানোয় ভোটের পরেও কিছু পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রে খবর, মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতে কিছু কংগ্রেস সদস্য যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। পূর্বস্থলীর নসরতপুর পঞ্চায়েতে বিজেপি-র কিছু সদস্য দলবদল করেছেন। কালনার নান্দাইয়ে বেশ কিছু সিপিএম এবং কংগ্রেস সদস্য দলে যোগ দেওয়ায় বামেদের থেকে পঞ্চায়েত গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। এ ছাড়াও রায়না ২, খণ্ডঘোষ, জামালপুর, গলসি ২ ইত্যাদি ব্লকে অন্য দল থেকে বহু কর্মী-সমর্থক তাদের দলে যোগ দিয়েছেন বলে তৃণমূলের দাবি।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে দল যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে নানা সমস্যাও তৈরি হয়েছে। অন্য দল ছেড়ে আসা নেতা-কর্মীরা দলে এসেই পেতে চেয়েছেন নানা পদ। পুরনো কর্মীদের একাংশ আবার দলের রাশ নিজেদের হাতেই রাখতে চান। এর ফলে নানা এলাকায় তৈরি হচ্ছে কর্তৃত্বের সংঘাত। এ ছাড়া নানা পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় আসার পরে দলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে গোষ্ঠী-কলহ দেখা দিচ্ছে নানা এলাকায়। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনে দল কী ধরনের কৌশল নেয়, সে সব ব্যাপারে লোকসভা ভোটের আগে মিশ্র রাজনৈতিক ভাবধারা থেকে আসা লোকজনের ধারণা নেই। সে ব্যাপারে তাঁদের অবগত করা ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ময়দানে নেমে পড়েছেন।
সম্প্রতি দুর্গাপুরে এক কর্মিসভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে শৃঙ্খলা আনার ব্যাপারে জোর দেন। যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁদের দলের ইতিহাস জানার পরামর্শও দেন তিনি। বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেকে জানান, নেত্রী ভোটের ময়দানে নেমে পড়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন। সে জন্য দলীয় কর্মশালা করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এর পরেই তৎপর হয়েছেন জেলা নেতারা।
সম্প্রতি কালনা ১ ও পূর্বস্থলী ১ ব্লকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপনবাবু দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, সেখানে স্বপনবাবু নান্দাই-সহ কয়েকটি এলাকায় দলের কোন্দল নিয়ে সতর্ক করেন। নানা গোষ্ঠীকে এক সঙ্গে বসিয়ে সমস্যার কথা শোনেন তিনি। সেই সঙ্গে ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে বুথ ধরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা-সহ কয়েক দফা পরামর্শ দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিজের এলাকায় কাজের ব্যাপারে মন দেওয়া, গ্রামের বারোয়ারিতলা, গাছতলা, পুজো মণ্ডপে ছোট ছোট সভা করার কথাও মন্ত্রী বলেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই বৈঠকে থাকা এক তৃণমূল নেতা বলেন, “স্বপনবাবু জানিয়েছেন, কোথায় কোথায় গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে দলে, তা নেতৃত্বের অজানা নয়। এই সমস্যা জিইয়ে রাখলে ভোটে খারাপ ফলের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপনবাবু বলেন, “লোকসভা ভোটে বুথ স্তরে গিয়ে কাজ করা আমাদের লক্ষ্য। সে জন্যই কালনা মহকুমায় দু’টি বৈঠক করা হয়েছে। জেলা নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আরও কিছু বৈঠক করা হবে।” ভোটের আগে দলের কেউ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করলে কড়া শাস্তি নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। |