সংস্কারের বছর ঘুরতেই ফাটল-আগাছা মন্দিরে
ংস্কারের পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মন্দির চূড়ার পাথরের ফাঁক দিয়ে আগাছা দেখা গিয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে বড় গাছ। এমনকী পাথরের ফাটল দিয়ে উঁকি মারছিল শিকড়ও। কাটোয়ার কাছে জগদানন্দপুরে রাধাকৃষ্ণ জিউ মন্দিরের হাল দেখে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সংস্কারের কাজ নিম্নমানের হওয়াতেই এই বিপত্তি। ফের সংস্কারের দাবি তুলে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তাঁরা।
২০০৫ সালে রাজ্য পুরাতত্ব দফতর ৮২ ফুট উচ্চতার ওই মন্দিরটি সংস্কার করে। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে মন্দিরের চূড়ার পাথর বদলানো থেকে চূড়ায় জন্মানো গাছ নির্মূল করা সবই করা হয় সেই সময়। এছাড়াও আরও ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে এসটিকেকে রোড থেকে মন্দির পর্যম্ত পাকা রাস্তা তৈরি করে দেয় পুরাতত্ত্ব দফতর। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তখনই নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুরাতত্ব দফতর বা তাদের সহযোগী সংস্থা পূর্ত দফতর কেউই তাঁদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে মন্দির সংস্কারের বছর ঘুরতে না ঘুরতে মন্দিরের চূড়ার পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ফের আগাছা জন্মাতে শুরু করে। এখন সেখানে অশ্বস্থ, বটও উঁকি মারছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, দ্রুত মন্দির সংস্কার না হলে চূড়ার পাথর ভেঙে পড়বে।
পুরাতত্ত্ব দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৩৯ সালে ওই গ্রামেরই রাধামোহন ঘোষচৌধুরী মন্দিরটি তৈরি করে দেন। শোনা যায়, বাবার মৃত্যুর পরে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে মথুরা ও বৃন্দাবনে যান রাধামোহনবাবু।
মন্দিরের চূড়ায় জন্মেছে গাছ। —নিজস্ব চিত্র।
বৃন্দাবনের লালবাবু মন্দির দেখে মুগ্ধ হয়ে ওই আদলেই গ্রামে ফিরে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা নেন তিনি। ঠিক করেন, বেলে পাথর দিয়ে মন্দির তৈরি হবে। সেই মতো মথুরা, বৃন্দাবন ও মির্জাপুর থেকে গঙ্গা পথে বেলে পাথর নিয়ে আসা হয়। কথিত আছে, গঙ্গা তীরবর্তী দাঁইহাট কিংবা অগ্রদ্বীপের কাছে বেলে পাথর নামানো হয়। সেখান থেকে খাল কেটে জলপথে জগদানন্দপুর পর্যন্ত বালি পাথর নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া রাজমহল এলাকা থেকেও কালো পাথর বা কষ্টি পাথর নিয়ে আসা হয়। মন্দিরটি তৈরি করার জন্য উত্তরপ্রদেশ থেকে ১৫ থেকে ২০ জন বিশেষ কারিগর আসেন। শোনা যায়, প্রায় ২০ বছর ধরে মন্দিরটি তৈরি করেন তাঁরা। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজের সঙ্গে প্রতিটি থামে রয়েছে কষ্টি পাথরের নানা রকম মূর্তি। অপূর্ব শিল্পকলা নৈপূণ্যের এই মন্দিরটি ১৯৬৭ সালে অধিগ্রহণ করে পুরাতত্ব দফতর।
সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে ১৯৭৫ সালে মন্দির সংস্কারে প্রথম হাত দেয় রাজ্য পুরাতত্ব দফতর। এর তিরিশ বছর পরে বিগত বাম আমলে, ২০০৫ সালে সংস্কারের কাজে ফের হাত পরে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পাথরের নীচ পর্যন্ত গাছের শিকড় নির্মূল করা হয়নি বলেই পাথরের ফাঁক দিয়ে নতুন করে গাছ জন্মাচ্ছে। এ ছাড়াও চূড়ার পাথরগুলি পরস্পরের সঙ্গে লোহার বা পিতলের আংটা দিয়ে লাগানো ছিল। ২০০৫ সালে সংস্কার করার সময় লোহার শিকল ব্যবহার করেনি পুরাতত্ব দফতর। ফলে কয়েক বছর পরে ফের পাথরগুলো খুলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও গ্রামবাসীদের দাবি। ওই গ্রামের শতদল রায়, প্রণব অধিকারীদের অভিযোগ, “সংস্কারের সময়ে মন্দিরের ভাঙা পাঁচিলটিও সংস্কার না করে সিমেন্ট আর বালি দিয়ে কোনও রকমে কাজ শেষ করা হয়। দক্ষ মিস্ত্রী দিয়ে পাথরের কাজ করা হয়নি।” ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা মন্দির প্রতিষ্ঠাকারীদের উত্তরাধিকারী শান্তব্রত ঘোষ বলেন, “আমরা চাই, মন্দিরটিকে ভাল করে সংস্কার করুক পুরাতত্ত্ব দফতর।”
মন্দিররে কাছে দাঁইহাট শহরের বাসিন্দা তথা রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “ওই মন্দির সংস্কারের জন্য আমরা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অনেক চিঠি পেয়েছি। সরেজমিনে মন্দির পরিদর্শনের পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.