পুলিশের চিন্তা বাড়িয়েছে সিলমোহর। ডিএসপি-তে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণায় অভিযুক্তেরা যে সিলমোহর ব্যবহার করেছে, তা দেখতে হুবহু সংস্থার সিলমোহরের মতো। এই ঘটনার পরে কপালে ভাঁজ পুলিশ কমিশনারেটের। ডিএসপি-তে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার সঙ্গে সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও কারও যোগ থাকতে পারে, এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ডিএসপি-র সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশ কয়েক জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো জানান, পুলিশের কাজে সংস্থার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
ডিএসপি-তে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনা আগেও ঘটেছে একাধিক বার। ধরাও পড়েছে অনেকে। কিন্তু সংস্থার ভিতরের কেউ জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে আগে তেমন চর্চা হয়নি। কিন্তু রবিবার কলকাতার রাজারহাটের বাসিন্দা জয়প্রকাশ দাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেরার পরে তেমন সম্ভাবনার কথাও মাথায় এসেছে বলে পুলিশের একাংশের দাবি। পুলিশের ওই অংশের দাবি, এমন সন্দেহের কারণ, ধৃতের কাছ থেকে যে সমস্ত কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে সেগুলিতে সেল-ডিএসপি-র যে সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছে তা দেখতে আসল সিলমোহরের মতোই।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, সিলমোহর দেখে আসল না নকল তা বোঝার উপায় নেই। তবে যে সব সই রয়েছে, তা আসল না নকল তা বুঝতে সময় লাগবে। কী ভাবে সিলমোহর হুবহু এক হয়, তা নিয়েই তদন্তকারী অফিসারেরা চিন্তায় পড়েছেন। আর তা থেকেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে, ডিএসপি-র সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনও কর্মী এর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও থাকতে পারেন। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, সেই সংযোগ থেকে আসল সিলমোহর প্রতারকেরা হাতিয়ে নিয়েছে, এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশের দাবি, জেরায় জয়প্রকাশ জানিয়েছে, রাজারহাটে তাদের একটি সংস্থা আছে। অনলাইনে বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তারা বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই মতো সেল-ডিএসপি-র একটি নকল ওয়েবসাইট তারা বানায়। সেই ওয়েবসাইট দেখে ডিএসপি-তে চাকরির লোভে অন্ধ্রপ্রদেশের তিন ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণ পড়ুয়া যোগাযোগ করেন। পুলিশের দাবি, জেরায় জয়প্রকাশ তিন জনের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ৮০ হাজার টাকা দেন। এ দিকে জয়প্রকাশের গতিবিধি দেখে ওই তিন যুবকের সন্দেহ জাগে। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ ওই তিন যুবকের পক্ষ নিয়ে আরও টাকা দেওয়ার নাম করে জয়প্রকাশকে দুর্গাপুরে ডাকে। জয়প্রকাশ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে দুর্গাপুরের মেনগেটের কাছে আসে। পুলিশ সেই সময় তাকে ধরে ফেলে। কিন্তু বাকি দু’জন পালিয়ে যায়। তার কাছে বেশ কয়েকটি এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং নগদ টাকা উদ্ধার হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও একাধিক এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০০৬ সালের ২৯ জুন ডিএসপি হাসপাতালে চাকরির জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এসে ধরা পড়ে দুই যুবক। তাদের জেরা করে পর দিন দুর্গাপুরের একটি হোটেল থেকে ধরা হয় তিন ভাইকে। ধৃতেরা মুঙ্গের, জামুই এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের দাবি, চাকরির লোভে তাঁরা প্রত্যেকে দেড় লক্ষ টাকা করে দিয়েছিলেন এক ব্যক্তিকে। সে-ই তাঁদের নিয়োগপত্র দিয়েছিল। ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর কারখানার ভিতরে তিন যুবকের কাছ থেকে নকল নিয়োগপত্র উদ্ধার হয়। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ডিএসপি-তে চাকরি দেওয়ার নাম করে একাধিক প্রতারণা চক্র বেকারদের কাজে লাগাচ্ছে বরাবরই।” ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো অবশ্য জানান, কাজে যোগ দেওয়ার আগে কড়া নজরদারির মধ্যে কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। সেই সময় জাল নিয়োগপত্র ধরা পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, “রবিবারের ঘটনা নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যেই সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ডিএসপি-র পক্ষ থেকে পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।” |