বকেয়া মজুরি না মেলায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমস্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন শ্রমিকেরা। বুধবার সকালে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা হুমকি দিয়েছেন, “বকেয়া মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত সব কাজ বন্ধ থাকবে।” মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, শ্রমিকদের মজুরি-সহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রে বকেয়া টাকার পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে পুঞ্চ লয়েড কোম্পানির এক সংস্থাকে। ২০১১ সালে জানুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা মেডিক্যাল কলেজের কাজ শুরু করে। ওয়েষ্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড ওই ঠিকাদার সংস্থাকে ১৮ মাসের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। কিন্ত ৩৭ মাস পার হয়ে গেলেও ৫০ শতাংশ কাজ বাকি বলে অভিযোগ। হাসপাতালে বর্তমানে ২০০-র বেশি শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। রাজমিস্ত্রিদের মজুরি ৩৫০-৪০০ টাকা ও জোগানদারদের মজুরি ২৫০-৩০০ টাকা। ওই ঠিকাদার সংস্থা ছোট শ্রমিক সরবরাহকারীদের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়ে কাজ করছে।
শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করার জন্য ঠিকাদার সংস্থাকেই দুষেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় ওই ঠিকাদার সংস্থাকে টাকা মেটানো হয়েছে। অথচ তাঁরা শ্রমিকদের মজুরির টাকা আটকে রেখেছে।” তিনি জানান, ওই ঠিকাদার সংস্থা একসঙ্গে রাজ্যের তিনটি মেডিক্যাল কলেজের কাজ করছে। অথচ ওদের কাজ করার ক্ষমতা নেই। স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলব। যদি ওই ঠিকাদার সংস্থা কাজ করতে না পারে, তাহলে কাজের বরাত অন্য কাউকে দেওয়া হোক।”
বকেয়া মজুরির কথা স্বীকার করেও ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুঞ্চ লয়েড কোম্পানির তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে সরকার পুরো টাকা মেটায়নি। ওই সংস্থার মেডিক্যাল কলেজের ইনচার্জ শুভাশিস সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “আমরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ৪৩ কোটি টাকার কাজ করেছি। কিন্তু রাজ্য সরকার ২৩ কোটি মিটিয়েছে। সরকার বকেয়া টাকা না দেওয়ায় শ্রমিকদের মজুরির টাকা দিতে পারছি না। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত মজুরি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিক সরবরাহকারীরা। শ্রমিক সরবরাহকারী কয়েশ আলির অভিযোগ, “আমার ৪৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের ১২ লক্ষ টাকা মজুরির টাকা বাকি। বকেয়া টাকার ঠিকাদার সংস্থার কাছে গেলে রোজ ঘোরাচ্ছে। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির টাকা দিতে পারছি না।” আরেক শ্রমিক সরবরাহকারী জাকির হোসেনের ক্ষোভ, “আমার অধীনে ৭০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদেরকেও তিন মাস টাকা দিতে পারছি না। বকেয়া টাকা না পেয়ে এ দিন শ্রমিকরা ক্ষেপে যান।” ওই সংস্থার তরফে শুভাশিস সুব্রহ্মণ্যমের আশ্বাস, “সাত দিনের মধ্যে শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া মজুরির টাকা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।” |