হাসপাতালের দু’টি লিফ্ট বিকল,
সিঁড়ি ভেঙেই চলছে ওঠা-নামা
পাঁচ মাস আগে যন্ত্রাংশ চুরি যায় একটি লিফ্টের। মেরামতির অভাবে এখনও সেটি অচল হয়ে পড়ে আছে। কার্যতই সেখান থেকে কোনও পরিষেবা আশা করা যায় না। আর একটি লিফ্ট আছে। চার দিন আগে সেটিরও যন্ত্রাংশ ভেঙে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে পরিষেবা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছেন রোগী থেকে রোগীর আত্মীয়-পরিজন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মী সকলেই। এই অবস্থায় সিঁড়ি ভেঙে রোগীদের নিয়ে উঠতে হচ্ছে। এমনই অবস্থা রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, লিফ্ট দু’টি মেরামতির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে লিফ্ট পরিষেবা স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
দু’বছর আগে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালকে জেল হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। খাতায়-কলমেও তাই লেখা হয়। জেলা সদর সিউড়িতে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে আলাদা করে একজনকে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং হাসপাতাল চত্বরে একটি আলাদা অফিসও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোগত উন্নতি হয়নি। শয্যা সংখ্যা এখনও ২৮৬তেই রয়েছে। আর ওই শয্যা সংখ্যা নিয়ে পুরুষ, মহিলা, প্রসূতি, সংক্রমণ, শিশু বিভাগ চলছে।
বিকল লিফ্ট।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রামপুরহাট হাসপাতালের লিপটের বেহাল চিত্রটা ছিল এরকম লোহার ভারি স্ট্রেচারে করে রোগীদের নিয়ে কেউ দোতলায় কেউ বা যাচ্ছেন তিনতলা বা চারতলায় উঠছেন। এটা তো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ের চিত্র। ভর্তির পর এক্সরে করার জন্য রোগীকে কোলে করে একতলায় আনতে হচ্ছে। আবার যে সমস্ত রোগীর আত্মীয়-পরিজন কাছে নেই, তাঁকে একতলা থেকে চারতলার সিঁড়ি ভাঙতে দেখা গিয়েছে। হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রের কর্মীরা জানালেন, রবিবার থেকে লিফ্ট খারাপ। ফলে সমস্যা তো হচ্ছেই। রামপুরহাট থানার বগটুই গ্রামের বৃদ্ধা লায়লি বিবি এ দিন সকালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভর্তি হন। এক্সরে করার জন্য দেখা যায়, তিনতলায় থাকা মহিলা ওয়ার্ড থেকে ছেলের কোলে করে তাঁকে নামতে হচ্ছে। তিনি বললেন, “একে তো শ্বাসকষ্টের রোগী। তার পরে এই বয়সে এইভাবে কি নীচে নামা যায়?” একই রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া মুরারই থানার ধানগড়া গ্রামের বয়স্ক রোগী মনতাজ শেখকে সিঁড়ি দিয়ে তিন বার ওঠানামা করতে হয়েছে। যন্ত্র চালিত মোটর ভ্যান উল্টে যাওয়ায় শরীরে গরম জল পড়ে গুরুতর জখম হয় রামপুরহাটের শিউড়া গ্রামের কিশোর রাহুল দাস। তাকে স্ট্রেচারে করে চারতলায় নিয়ে যান আত্মীয়রা। তাঁদের ক্ষোভ, মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, সাংসদ এমনকী রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের লোকেরা। প্রায়ই হাসপাতাল ঘুরে যাচ্ছেন। কিন্তু পরিষেবার উন্নতি নেই।
হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদার বদলি হয়েছেন। নতুন সুপার হয়েছেন সুবোধ মণ্ডল। কিন্তু সুবোধবাবু এখনও কাজে যোগ দেননি। কাজ সামলাচ্ছেন হিমাদ্রিবাবুই। তিনি বলেন, “পাঁচ মাস আগে একটি লিফ্টের যন্ত্রাংশ চুরি যায়। নতুন যন্ত্রাংশ কেনার টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। চার দিন আগে খারাপ হয়ে যাওয়া লিফ্ট সারানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের ইঞ্জিনিয়রকে বলা হয়েছে। তাঁরা বুধবারের মধ্যেই ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাধানাথ মাড্ডি বলেন, “সুপার আমাকে বলেছেন একটি লিফ্ট আজ বা কালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। দেখা যাক কী হয়।”
স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীকে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, পাঁচ মাস আগে চুরি হয়ে যাওয়া লিফ্টের যন্ত্রাংশ বদলানোর জন্য পূর্ত দফতরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকে আনুমানিক ৮২, ০০০ টাকা খরচের একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সুপার সেই প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘদিন আগে চিঠি দিয়ে জানিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে সেই টাকা না পাওয়ায় যন্ত্রাংশ বদলানো যায়নি। পূর্ত দফতরের (ইলেকট্রিক্যাল) সহকারী বাস্তুকার সৌমিত্র মল্লিক বলেন, “একটি লিফ্টের যন্ত্রাংশ বদলের জন্য দীর্ঘদিন আগে আনুমানিক একটি খরচের হিসেব করা হয়েছে। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় যন্ত্রাংশ কেনা যাচ্ছে না। অন্য একটি লিফ্টের উপর ২৪ ঘণ্টা চাপ পড়ার জন্য সেটিও খারাপ হয়ে গিয়েছে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “কী হয়ে আছে দেখতে হবে। নতুন সুপার আসুক। তিনি জানালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” সৌমিত্রবাবু বলেন, “লিফ্টগুলি অনেক পুরনো। তাই যন্ত্রাংশ খুঁজে পেতে সমস্যাও হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লিফ্ট চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ছবি: অনির্বাণ সেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.