‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)’-এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাঙ্ক’ এবং জীবাণুমুক্ত করার নিজস্ব ব্যবস্থা (সেল্ফ স্টেরিলাইজেশন সিস্টেম)। এই দুই বিভাগকে হাতিয়ার করে শিশু-মৃত্যুর হার কমল এসএসকেএমে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতি এক হাজার সদ্যোজাতের নিরিখে এসএসকেএমে ‘নিউবর্ন মর্টালিটি রেট’ বা নবজাতক-মৃত্যুর হার ২০১২ সালে ছিল ২৯। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬-এ। সারা রাজ্যে অবশ্য এই শিশু-মৃত্যুর হার ৩২।
শিশু-মৃত্যুর এই হার কমার পিছনে এসএনসিইউ-এর সঙ্গে হিউম্যান মিল্ক ব্যাঙ্ক এবং জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থাকেই মূলত কৃতিত্ব দিচ্ছেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এত দিন পর্যন্ত ওই বিভাগের সমস্ত যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে মা ও শিশুর পোশাক আসত হাসপাতালের সেন্ট্রাল স্টোর থেকে। কিন্তু অনেক সময়েই সেন্ট্রাল স্টোর ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত করা হত না বলে অভিযোগ। এক চিকিৎসকের কথায়, “এসএনসিইউ-এ জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা থাকা সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন। সে কারণেই আমাদের বিভাগে পৃথক স্টেরিলাইজিং ইউনিট বা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা খোলা হয়েছে।” এখন যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে মা ও শিশুর পোশাক সব কিছুই জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে এসএনসিইউ-এর মধ্যেই। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমেছে বলে দাবি চিকিৎসকদের।
এসএনসিইউ-এ সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করছে হিউম্যান মিল্ক ব্যাঙ্কও। এমনটাই দাবি চিকিৎসকদের। এসএসকেএমের এসএনসিইউ-এর অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর শ্যামলকুমার সর্দারের মতে, “অতীতে অনেক সময়েই জটিল রোগে ভুগতে থাকা শিশুদের বিভিন্ন কারণে মায়ের দুধ দেওয়া যেত না। সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম দুধ দিতে হতো। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ত। কিন্তু হিউম্যান মিল্ক ব্যাঙ্ক হওয়ার পরে আমরা মায়ের দুধই সব শিশুকে দিতে পারছি।” শ্যামলবাবুর দাবি, “মায়ের দুধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। শিশুদের দেহে মায়ের দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।” একই সঙ্গে এসএনসিইউ-এর ডাক্তার-নার্সদের নিষ্ঠাও এই সাফল্য আনতে সাহায্য করেছে বলে দাবি শ্যামলবাবুর।
কেন্দ্রের জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় রাজ্যের সব জেলায় সদ্যোজাতদের চিকিৎসায় অন্তত একটি করে পৃথক ইউনিট (এসএনসিইউ) খোলার কথা। যেখানে নানা ধরনের জটিল অসুখে আক্রান্ত সদ্যোজাতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। ১২-১৬টি বেড নিয়ে প্রতি জেলা হাসপাতালে এই এসএনসিইউ খোলার কথা। ২০১০-১১ সালেই রাজ্যে মোট ২৩টি এসএনসিইউ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাম সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ওই প্রকল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। রাজ্যের সমস্ত ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’-কে একসূত্রে গাঁথতে সফ্টওয়্যারের সাহায্য নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
এই অবস্থায় এসএসকেএমের সাফল্য নিঃসন্দেহে সারা রাজ্যকে পথ দেখাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “সাধারণ ভাবে এসএসকেএম রাজ্যের অন্যতম সেরা সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় জটিলতম রোগে আক্রান্ত শিশুরাই ভর্তি হয়। এই পরিস্থিতিতে সেখানে এসএনসিইউ-এ শিশু-মৃত্যুর হার কমার ঘটনা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য।” ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ’-এর অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষ বলেন, “শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণটাই সব চেয়ে বড় সমস্যা। সেটা আটকাতে পারলেই শিশু-মৃত্যুর হার কমে। ঠিক এই কাজটাই এসএসকেএমে হয়েছে। তাই তার ফলও মিলেছে।” |