জোগানে টান পড়ার আশঙ্কা কৃষি দফতরের
সব্জি-চাষ ছেড়ে নজর চা বাগানে
ক্রমাগত লোকসান এড়াতে চাষিরা চা পাতা উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় জলপাইগুড়ি মহকুমায় শীতের সব্জি চাষের এলাকা কমে গিয়েছে। সম্প্রতি কৃষি দফতরের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এ অবস্থায় উত্তরবঙ্গের বাজারগুলিতে সব্জির জোগান কতটা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব তা নিয়ে কৃষি কর্তাদের মধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি মহকুমায় ৩০ শতাংশের বেশি সব্জি চাষের এলাকা চা বাগানে পাল্টে গিয়েছে। বছর বারো আগে মহকুমায় যেখানে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হত এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার হেক্টরে। সবচেয়ে বেশি চাষের এলাকা নষ্ট হয়েছে ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর, রাজগঞ্জ ব্লকে। ধূপগুড়ি ব্লকেও এই সমস্যা বাড়ছে। এক দশক আগেও যে সব জমি হেমন্ত-শেষে নানা সব্জিতে ভরা থাকত, সেখানে চা চারা রোপণ করার প্রস্তুতি চলছে। জুলাই থেকে ব্লক স্তরে চলা কৃষি কর্মীদের সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এলেও মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “শুধু সব্জি চাষের উঁচু জমি নয়, ধান চাষের এলাকায় এর প্রভাব পড়েছে।”
জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতিও এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছে। সংস্থার সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, “২০০১-এ মহকুমার ৮৭০০ একর জমিতে ১৮২৪টি ছোট চা বাগান ছিল। বর্তমানে ৫০ হাজার একর জমিতে বাগানের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার। সব্জি, ধান খেতে চা বাগান হচ্ছে শুনে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও কেউ তা শুনছেন না।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়িতে শীতকালীন সব্জি চাষের এলাকা ৪৫০০ হেক্টর থেকে কমে হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর। ২০০১-এ যেখানে ২৭ হাজার হেক্টরে ধান চাষ হত, তা কমে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার হেক্টরে। রাজগঞ্জ ব্লকে ৫০০০ হেক্টর সব্জি চাষের জমি চা বাগানে বদলে গিয়েছে। এ-ছবি জলপাইগুড়ি সদরের ধূপগুড়ি ব্লকেও। এখানে প্রায় ৪০০০ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হত। ইতিমধ্যে পাঁচশো হেক্টর ধান ও সবজি চাষের জমিতে চা বাগান হয়েছে। সব চেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে বেগুন ও কপি চাষের এলাকা।
মহকুমায় উৎপাদিত সব্জি স্থানীয় বাজার ছাড়া অসম, বিহার, হরিয়ানা, দিল্লিতেও যায়। প্রশ্ন উঠেছে তবু কেন সব্জি চাষে উদাসীনতা?
ময়নাগুড়ির আমগুড়ির এক বেগুন চাষি বিপিন রায় জানান, সব্জি বিক্রি করার বাজারের ঠিক নেই। এক বছর লাভ তো পরের বছর ব্যাপক ক্ষতি। এ ছাড়া মজুর মেলে না। তার উপরে খরচও বেড়েছে। তাই চার বছর আগে তিন বিঘা বেগুন খেত তুলে তিনি চা বাগান করেছেন। বিপিনবাবু বলেন, “বছরে ২ হাজার কেজি পাতা পাচ্ছি। এক কেজি পাতা ১৩ টাকা দামে বিক্রি করে দু’টাকা লাভ থাকছে।” একই বক্তব্য রাজগঞ্জের কুকুরজানের চাষি দেলোয়ার হোসেনেরও। তিনিও সব্জি চাষ ছেড়ে ৫ বিঘা জমিতে চা বাগান করেছেন। স্থানীয় চাষিদের ওই যুক্তির সামনে অসহায় কৃষি কর্তারা জানান, চাষিদের বুঝিয়ে কোনও রকম লাভই হচ্ছে না। কিন্তু এ ভাবে চললে স্থানীয় বাজারগুলিতে বিভিন্ন সব্জির জোগান স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.