চুড়িদার পড়া এক মহিলা। লালচে চুল। আর একজন তুলনায় বেঁটে, ছিপছিপে গড়ন। পরনে লাল-কালো চুড়িদার। তৃতীয় জনের শাড়ি পরা। একটু মোটাসোটা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি শহরের বাবুপাড়ায় এক বাড়িতে ঢুকে ছুরি দেখিয়ে ডাকাতি করে ওই ‘তিন মূর্তি’ এখন শহরবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও তিন জনকে পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। পুলিশ তল্লাশি চালালেও তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি। শিলিগুড়ির ডিসি (সদর) ও জি পাল বলেন, “এমন অভিযোগ অভিনব বটে। ওই মহিলা সারা দিন দু’টি ছোট ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। এটা জেনেই মহিলাদের দল বাড়িতে ঢুকেছিল বলে মনে হচ্ছে। দাগি মহিলা অপরাধীদের ছবি দেখিয়ে তিন জনকে শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।” |
ডাকাতির ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সমতাদেবী। শিলিগুড়িতে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |
ওই রাতে যখন প্রথম খবর পান, শিলিগুড়ি থানার পুলিশ অফিসারেরা চমকে গিয়েছিলেন। খবরটা ছিল এরকম, শহরের দক্ষিণ বাবুপাড়ার একটি বাড়িতে ঢুকে মাঝবয়সী তিন মহিলা ষষ্ঠ শ্রেণির এক পড়ুয়ার গলায় ছুরি ধরে, তার মা এবং অষ্ঠম শ্রেণির পড়ুয়া দাদাকে শৌচাগারে বন্ধ করে বাড়ি থেকে ৪০ হাজার টাকা নগদ এবং রুপোর সামগ্রী লুঠ করে পালিয়েছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অফিসারেরা বাবুপাড়ার ওই বাড়িতে গিয়ে আগের বিভিন্ন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলাদের ছবি দেখিয়েছেন। যদিও তারা কেউ সেই দলে ছিল না বলে মা এবং দুই ছেলে জানিয়েছে।
কী ঘটেছিল মঙ্গলবার বিকেলে?
দক্ষিণ বাবুপাড়ার একটি গলির ভিতরে তিন তলার বাড়ির নীচ তলায় বছর দু’য়েক ধরে ভাড়া থাকেন মোটর যন্ত্রাংশের দোকানের কর্মী সুভাষ শর্মা। বিকেল পাঁচটা নাগাদ সুভাষবাবু বাড়ি ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী সমতাদেবী এবং দুই ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রোহিত এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ডলার বাড়িতে ছিল।
হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বাজে। ডলার যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলে অল্প ফাঁক করতেই, বেশ শান্ত গলায় এক মহিলা বাইরে থেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মা বাড়িতে আছে’? তিন মহিলাকে দেখে দরজা খুলে দেয় ডলার। যে মহিলা শান্ত গলায় প্রশ্ন করেছিল, সে-ই ঘরে ঢুকে ডলারের গলা ধরে দেওয়ালের দিকে নিয়ে যায়। ততক্ষণে সমতাদেবী রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। শাড়ির আঁচলের আড়াল থেকে ছুরি বের করে ডলারের গলার কাছে ধরে ওই মহিলা।
পাশের ঘর থেকে সমতাদেবীর বড় ছেলে রোহিতও চলে আসে। সমতাদেবী এবং রোহিতকে ঘরের পাশের শৌচাগারে বন্ধ করে দিয়ে, পাশের ঘরে ঢুকে আলমারি খুলে রুপোর কয়েকটি ছোট বাসনপত্র বের করে নেয়। আর একটি আলমারির চাবি কোথায় রয়েছে, সেটা ডলারের থেকে জেনে আলমারি খুলে প্রায় ৪০ হাজার টাকাও তারা নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। সমতাদেবী জানিয়েছেন, তিন মহিলার মধ্যে একজন শাড়ি পরা ছিল, বাকি দু’জন পরেছিল উজ্জ্বল রঙের চুড়িদার। তিন জনের বয়সই ৩০ থেকে ৪০ এর মধ্যে।
সমতাদেবী বলেন, “চিৎকার করলে ছেলেকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয় মহিলারা। আমাকে আর বড় ছেলেকে শৌচাগারে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়।” একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র ডলার বলে, “মাকে আর দাদাকে শৌচাগারে ঢুকিয়ে আমার হাত বেঁধে দেয়। আলমারি থেকে মায়ের ওড়না বের করেই হাত বাঁধে। তারপর চাবি নিয়ে আলমারি খোলে।” সমতাদেবীরা হিন্দিভাষী। তিন মহিলাও তাঁদের হিন্দিতেই হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “মহিলারা চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু তিন মহিলা দল বেঁধে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, এমনটা আগে শোনা যায়নি।” এলাকার কাউন্সিলর প্রশান্ত চক্রবর্তীর কথায়, “ঘটনা শুনে বাড়িতে অচেনা কেউ এলেও দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশকে দ্রুত ঘটনার কিনারা করতে বলেছি। না হলে আতঙ্ক বাড়তেই থাকবে।” |