মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করার ছ’মাসের মধ্যে জমি খুঁজে পুরুলিয়া জেলার একমাত্র সরকারি ডিগ্রি কলেজ তৈরির কাজে নামল জেলা প্রশাসন।
মানবাজার ২ ব্লকের শুশুনিয়া গ্রাম সংলগ্ন মাঠে, মানবাজার বান্দোয়ান রাস্তার পাশে ওই কলেজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। রাজ্যের স্বনিযুক্তি ও স্বনির্ভর প্রকল্প দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহল এলাকায় কলেজ স্থাপনের জন্য জায়গা বাছাই শুরু হয়। প্রাথমিক আলোচনার পরে ঠিক হয় জেলায় সব ব্লকে ডিগ্রি কলেজ থাকলেও, মানবাজার ২ ব্লকে একটিও কলেজ নেই। ওই কলেজকে কেন্দ্র করে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাড়ানো হবে।” |
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাঘমুণ্ডিতে এসে জঙ্গলমহল এলাকায় একটি সরকারি কলেজ স্থাপন করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই কলেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। মানবাজার ২ এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে একটি ডিগ্রি কলেজ তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, সে কারণে ওই সরকারি কলেজ মানবাজার ১ ব্লক এলাকায় তৈরি করা হবে বলে প্রশাসন ঠিক করে। স্থানীয় ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতিকে কলেজের জন্য জমি চিহ্নিত করতে ভার দেওয়া হয়েছিল। মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গীতা মাহাতো বলেন, “শুশুনিয়া গ্রামে একলব্য স্কুলের সামনে জমি রয়েছে। সেখানেই কলেজ নির্মাণের কাজ হবে বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা প্রায় ৬ একর জমি দান করেছেন।” মানবাজার ২ বিডিও পার্থ কর্মকার বলেন, “দুর্গাপুজোর সময় জমি পাওয়ার পরে কলেজ তৈরির জন্য টেন্ডার করা হয়। এ বার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।”
মানবাজার বান্দোয়ান রাস্তায়, শুশুনিয়া গ্রাম সংলগ্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেল নির্মাণকারী সংস্থা লে আউট অনুযায়ী জমিতে দাগ দেওয়ার কাজ করছে। কোন জায়গায় কলেজ ভবনের কি তৈরি করা হবে, সেই অনুযায়ী ভিতের জন্য জমি খোঁড়ার প্রস্তুতি চলছিল। মাঠে ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ মানবাজার ২ ব্লকের বাসিন্দা নিয়তি মাহাতো। তিনি বলেন, “কলেজের ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর-সহ নানা কাজে এখনও পর্যন্ত মোট সাত কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। প্রশাসনিক ভবন, সাইকেল স্ট্যান্ডের জন্য আলাদা ভাবে খরচের নির্দেশ দেওয়া আছে।”
মানবাজারের বাসিন্দা পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টেনারি কলেজের অধ্যক্ষ চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার মধ্যে এই প্রথম এখানে একটি সরকারি ডিগ্রী কলেজ স্থাপন হতে চলেছে। আশাকরি এই কলেজকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের সুযোগ বাড়বে।” তিনি জানান, সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত কলেজগুলিতে কলেজ সার্ভিস কমিশন থেকে শিক্ষক নিয়োগ হয়। কিন্তু সরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে। রাজ্য সরকার সরাসরি এই ধরনের কলেজের যাবতীয় খরচ বহন করে। তবে পঠনপাঠন, সিলেবাস সব অন্য কলেজের মতো একই।
এতদিন মানবাজার ২ ব্লকের ছাত্রছাত্রীরা কলেজে পড়তে মানবাজার, বরাবাজার ও পুঞ্চার কলেজে যেতেন। বাড়ির কাছে কলেজ তৈরি হতে দেখে তাঁরাও এ বার খুশি। নির্মাণকারী সংস্থা তরফে অঞ্জন শরাফ বলেন, “তিনতলা কলেজ ভবনের নির্মাণের জন্য এক বছর সময় ধার্য করা হলেও তার আগেই নির্মাণের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।” |