|
|
|
|
মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক, ছাত্রদের টেক্কা ছাত্রীদের |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
রাজ্যজুড়ে কন্যাভ্রূণ হত্যা, নারী নির্যাতনের রেখচিত্র উর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিকপরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ছেলেদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল মেয়েরা।
এই প্রবণতাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মানছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। তাঁর ব্যাখ্যা, “আসলে মেয়েরা এখন যথেষ্ঠ সচেতন। তাদের মধ্যেও পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ছে।” শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের কথায়, “ক’য়েক বছর আগেও মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষায় ছাত্রীদের থেকে ছাত্রদের সংখ্যা বেশি থাকত। এখন ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভালো দিক।” কী বলছেন শিক্ষকরা? এলাহিয়া হাই মাদ্রাসার শিক্ষক মির্জা আজিবুর রহমান বলেন, “এখন মাদ্রাসা থেকে অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধে মেলে। বছরে দু’টো করে পোষাক দেওয়া হয়। মিড-ডে মিল তো আছেই। আমরা দেখছি, ছাত্রদের একাংশ সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর মাদ্রাসায় আসে না। অনেকেই কাজের খোঁজে যায়। কেউ বাবা-মা’কে কাজে সাহায্য করে। কিন্তু, ছাত্রীরা পড়া
চালিয়ে যায়।” |
|
খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়া লোহানিয়া হাইমাদ্রাসায় চলছে পরীক্ষা। |
মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্য আবদুল কাদের মণ্ডল বলেন, “এটা ঠিক, আগের থেকে এখন মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহ বেড়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে, সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধের জন্য।” নয়াগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ সাঁতরার বক্তব্য, “আমরা দেখেছি, ছাত্রীদের ফলাফলও খুব একটা খারাপ হচ্ছে না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রদের তুলনায় ভালোই হচ্ছে।” মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়ের সম্পাদক সুব্রত সরকার বলেন, “শুধু পড়াশোনা কেন? মেয়েরা এখন সব ক্ষেত্রেই ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে চলছে।” একই মত খড়্গপুরের ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষের।
মাধ্যমিক-মাদ্রাসায় মেয়েদের সংখ্যাবৃদ্ধি যদি স্বস্তির হয়, তবে উদ্বেগের হল গোটা দেশেই কন্যা ভ্রুণ হত্যা বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর তার ব্যতিক্রম নয়। লালগড়ের জেলায় প্রতি এক হাজার পুরুষপিছু মহিলা ৯৬০। রাজ্যে ৯৪৭। আর দেশে প্রতি এক হাজার পুরুষপিছু মহিলা ৯৪০। ঠিক কী হারে কমছে কন্যার সংখ্যা? ১৯৬১ সালে গোটা দেশে ১ থেকে ৬ বছর বয়সী প্রতি এক হাজার পুত্র সন্তানপিছু কন্যা সন্তান ছিল ৯৭৬। আর ৫০ বছর পর ২০১১ সালে ওই সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৯১৪। অন্য দিকে, ১৯৬১ সালে এ রাজ্যে ১ থেকে ৬ বছর বয়সী প্রতি এক হাজার পুত্র সন্তানপিছু কন্যা সন্তানের সংখ্যা ছিল ১০০৮। আর ৫০ বছর পর ২০১১ সালে ওই সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৯৫০। সংখ্যাতত্ত্ব দেখে বিভিন্ন মহলের মত, লিঙ্গ অনুপাত এ ভাবে কমতে থাকলে নারীদের উপর অত্যাচার যেমন আরও বাড়বে, তেমনই মেয়েদের লড়াই করার ক্ষমতাও কমবে। এই অবস্থায় কন্যা ভ্রুণ হত্যা রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে সরকার।
কেন পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ছাত্রদের থেকে এগিয়ে থাকছে ছাত্রীরা? জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা সমান-সমানই হওয়া উচিত।” তাঁর ব্যাখ্যা, আগে ছাত্রদের সংখ্যা বেশি থাকত। কারণ, তখন স্কুলছুটের মধ্যে ছাত্রী বেশি হত। ছাত্রীদের একাংশ সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর স্কুলে আসত না। এখন স্কুলছুট ছাত্রীদের সংখ্যা কমেছে। তিনি বলেন, “এখন স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে। বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে পড়ার সুযোগ মিলছে। এটাও ছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ার অন্যতম কারণ।”
|
এগিয়ে মেয়েরা |
২০১৩ |
|
মাধ্যমিক |
মাদ্রাসা |
মোট |
৬৯, ৪৬৭ |
৮২২ |
ছাত্র |
৩৪, ২১১ |
৩১৫ |
ছাত্রী |
৩৫, ২৫৬ |
৫০৭ |
|
২০১৪ |
|
মাধ্যমিক |
মাদ্রাসা |
মোট |
৬৯, ৩৩১ |
৯৩৩ |
ছাত্র |
৩৪, ১৫৬ |
৩৭৭ |
ছাত্রী |
৩৫, ১৭৫ |
৫৫৬ |
|
|
|
|
|
|
|