সম্পাদকীয় ২...
কঠোর হউন
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সদিচ্ছা অপেক্ষা সৎকর্ম বেশি বাঞ্ছিত। পশ্চিমবঙ্গে অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্যে লাগাম পরাইবার সরকারি সদিচ্ছাটি শুনিয়া সে কথাই মনে হয়। প্রশাসনিক দায় পালনের বিষয়টি আর বিবিধ ধরনের পরিকল্পনা, প্রকল্প কিংবা কর্মশালা দিয়া সামলানো যাইবে না। অটো-রাজের বাড়বাড়ন্ত যে মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে সদিচ্ছা প্রকাশ ও তাহার চর্চার আর অধিক সময় বা অবকাশ নাই। এ বার হাতে-কলমে শাসনকাজটি করিবার মুহূর্ত আসিয়াছে। বিশেষ করিয়া যখন উপযুক্ত প্রশাসনিক দৃঢ়তার অভাবেই এই নৈরাজ্য-পরিস্থিতি উপস্থিত হইয়াছে, তখন আত্ম-সংশোধনই একমাত্র সম্ভাব্য পথ।
সন্দেহ নাই, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই এই অটো-রাজের বাড়বাড়ন্তের একটি বড় কারণ। সম্প্রতি এক বেপরোয়া চালক এক যাত্রীর মাথা ফাটাইয়া দেওয়ায় তাহাকে গ্রেফতার করা হইয়াছিল। ‘প্রতিবাদে’ বাকি চালকরা রুটটিই বন্ধ করিয়া রাখিলেন। অন্য এক ক্ষেত্রে অটোর ধাক্কায় এক বৃদ্ধ নিহত হইলেন। প্রশাসনিক সুরাহা হয় নাই। এই সব হইতে কী বার্তা পান জনসাধারণ কিংবা অটো-চালকগণ? মন্ত্রীরা যে হুমকি দেন, তাহা যে আদৌ বাস্তবায়িত হইবে না, এই কথাটি অটোচালক এবং যাত্রী, উভয় পক্ষই বিলক্ষণ জানেন। অর্থনীতিতে ‘গেম থিয়োরি’ বা দ্বন্দ্বতত্ত্বের একটি প্রাথমিক পাঠ: কোনও হুমকি বাস্তবায়িত হইবে কি না, সে বিষয়ে বিপরীত দিকের লোকটির ধারণা পূর্ব-অভিজ্ঞতার ফলেই স্পষ্ট থাকে। যে হুমকির বাস্তবায়ন সম্ভব নহে, পরিভাষায় যাহাকে ‘নন-ক্রেডিব্ল থ্রেট’ বলা হয়, তাহা বাস্তবে কিন্তু বিপরীত ফলদায়ী হয়। যেখানে আজ অবধি একটি অটোচালকেরও প্রকৃত শাস্তি হয় নাই, সেখানে অটোর রুট বন্ধ করিয়া দেওয়ার হুমকি যে নেহাতই কথার কথা, তাহা সকলেই বুঝিবেন। সুতরাং অটোচালকরাও বেপরোয়া, সাধারণ মানুষও জানেন, শেষ পর্যন্ত একমাত্র রাস্তা নিজেদের হাতে আইন তুলিয়া লওয়া। প্রশাসন কিছুই করিবে না, এই সর্বজনীন বিশ্বাসটি না ভাঙিতে পারিলে পরিত্রাণের পথ নাই। অটোর বেয়াদবিকে বিশুদ্ধ আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসাবে গণ্য করিয়া তদনুযায়ী কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা লওয়ার সময় আসিয়াছে। তাহাতে যদি অটো-চালকরা দীর্ঘস্থায়ী ধর্মঘটের পথে যান, বিভিন্ন রুটে অটো চালাইতে না চাহেন, তবে অটো ছাড়াই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর অভ্যাস রপ্ত করিতে হইবে। অটোরিকশা আবহমান কালের যান নহে। পূর্বেও অটো ছাড়াই শহর সচল থাকিয়াছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও থাকিবে। যাত্রিসাধারণের অসহায়তা, গন্তব্যে পৌঁছাইবার তাড়া ইত্যাদির সুযোগ লইয়া এক দল লোককে আইন-কানুন অগ্রাহ্য করিয়া রাজ্যের সর্বত্র দাপাইয়া বেড়াইতে দেওয়া যাইবে না। উপরিতলার যোগসাজশেই অটো-চালকরা সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ব্যবসা করিতেছেন, যথেচ্ছ ভাড়া দাবি করিতেছেন, না-দিলে সওয়ারিদের হেনস্থা করিতেছেন, এই অনুমান সর্বত্রচারী। অটোচালকরা যে রাজনীতির জরুরি কলকব্জা, তাহা বিচক্ষণ ব্যক্তিমাত্রেই জানেন। সুতরাং প্রশাসনের প্রথম কাজ, রাজনীতির যোগ-বিয়োগ বাদ দিবার সৎসাহস প্রদর্শন। নৈরাজ্য বন্ধ করিয়া সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাদানের প্রাথমিক কর্তব্যটুকু পালন করিবার দায় স্বীকার। কঠোর শাস্তি, প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল কিংবা গ্রেফতার করিবার মতো পদক্ষেপ ছাড়া উপায় নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.