সম্পাদকীয় ১...
গণতন্ত্র কাহাকে বলে
লোকসভায় স্বতন্ত্র তেলঙ্গানা রাজ্য বিল পাশ হইয়া গিয়াছে। বিলটি বিতর্কিত, সন্দেহ নাই, কিন্তু যে পদ্ধতিতে বিলটি পাশ হইল, তাহা আরও অধিক বিতর্কযোগ্য হইয়া দাঁড়াইল। প্রথমত, সংসদকে যে ভাবে নিশ্ছিদ্র বলয়ে পরিণত করিয়া বিল পাশের কাজটি সমাধা হইল, তাহাতে মনে হয় নাই, কোনও গণতান্ত্রিক দেশে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আইন প্রণীত হইতেছে। সংসদের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের জীবন্ত সম্প্রচার ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’র অজুহাতে বন্ধ রাখিয়া দেশবাসীকে বিল পাশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা হইল, সংসদ চত্বরের ভিতরে নজিরবিহীন ভাবে শত শত পুলিশ মোতায়েন হইল, দমকল, জলের ট্যাঙ্ক ইত্যাদিতে সংসদ চত্বর সজ্জিত হইল। চিত্রটি ঠিক গণতন্ত্রের পীঠস্থানের নয়, বরং রণক্ষেত্রের। সন্দেহ নাই, তেলঙ্গানা-বিরোধী এবং অবিভক্ত অন্ধ্রের সমর্থক সাংসদদের আগের দিনের ক্রিয়াকলাপ সরকার পক্ষকে অতিরিক্ত স্পর্শকাতর করিয়া তুলিয়াছিল, কিন্তু কেবল তাহারই কারণে এমন কর্তৃত্ববাদী পরিবেশে বিল পাশের প্রচেষ্টা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।
কেবল গোলযোগের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই পদ্ধতিগত ‘জরুরি অবস্থা’ বিচার করা অসুবিধাজনক আরও এই কারণেই যে প্রথমাবধিই ইউ পি এ সরকার তেলঙ্গানা বিষয়ে অস্বাভাবিক রাস্তা ধরিয়াছিল। এত বড় একটি বিভাজনকারী বিষয়ে কেন এমন রুদ্ধশ্বাস দ্রুততায় বিল পাশের তোড়জোড় হইবে, কেন-ই বা পর্যালোচনা, পুনর্বিবেচনা, এমনকী বিতর্কেরও কোনও সুযোগ না দিয়াই ঘটনাটি ঘটাইয়া ফেলিবার জন্য এমন তৎপরতা দেখা যাইবে, প্রশ্ন সমানেই উঠিতেছে। কিন্তু সরকার সে সব প্রশ্নের সামনেও এক পা পিছু হটে নাই, প্রবল তাগিদে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ করিয়া ছাড়িয়াছে। তাগিদটি যে কী, তাহা অবশ্যই সূর্যালোকের মতো দীপ্ত: নির্বাচনের আগে সীমান্ধ্র ও তেলঙ্গানা উভয়কেই অল্পবিস্তর না চটাইয়া বরং তেলঙ্গানার সম্পূর্ণ সমর্থন জিতিয়া লওয়ার সুযোগ কংগ্রেস হাতছাড়া করিতে রাজি নয়। সুতরাং প্রদেশবিভাগের মতো গুরুতর প্রশ্ন, কিংবা সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মানিয়া চলিবার মতো গুরুতর দায়, কোনওটিই নির্বাচনী তাড়নার সামনে কলিকা পাইল না। এই অসম্ভব সংকীর্ণদৃষ্টি রাজনীতি দিয়া আর যাহাই হউক, গণতন্ত্র হয় না। দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার প্রথমাবধি যে অপ- ও কু-শাসনের প্রমাণ রাখিয়া যাইতেছে, শেষ বেলাতেও তেমনই আর একটি দৃষ্টান্ত রচিত হইল। তেলঙ্গানা বিলের বিরোধী সাংসদরা যেমন সংসদের ভিতরে মরিচ-সন্ত্রাসের ন্যক্কারজনক উদাহরণ রাখিয়া গেলেন, এই সরকারও ততোধিক বিপজ্জনক পদ্ধতিগত অস্বচ্ছতার নিদর্শন রাখিয়া গেল। ভবিষ্যৎ দেশ দু-এরই মাসুল গুনিবে। নির্বাচনের দায় মহত্তম দায়। বিরোধী দল বিজেপিও তাহা প্রমাণ করিল। ঠিকই, বিজেপি নেতৃত্ব বরাবরই রাজ্য পুনর্গঠনের সমর্থক। বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্ব-কালে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ ভাঙিয়া যথাক্রমে উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ় রাজ্যের সৃষ্টি হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ ভাঙিয়া তেলঙ্গানা রাজ্য গড়ার প্রকল্পটিতেও তাই বিজেপির অসম্মতির কারণ ছিল না। কিন্তু ইহাও ঠিক যে, বিজেপি নেতৃত্ব বহু বার জানাইয়াছিলেন যে এমত গুরুতর বিষয়ে তাঁহারা তাড়াহুড়ার বিরোধী। তাঁহাদের সমর্থনের শর্তই ছিল, সংসদে সংশ্লিষ্ট বিলটি লইয়া পর্যাপ্ত আলোচনা ও বিতর্ক। অথচ কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সরকার সেই শর্ত না মানা সত্ত্বেও বিজেপি ভোটের হিসাব কষিয়া তড়িঘড়ি নিজের পূর্ব অবস্থান বদলাইয়া বিলের পক্ষে ভোট দিয়া সরকারের বিল পাশের পথ সুগম করিল। অবশ্য দুর্ভাগ্যজনক হইলেও ইহা অপ্রত্যাশিত নহে। ভারতীয় রাজনীতি প্রত্যহ সাড়ম্বরে প্রমাণ করিতেছে, নির্বাচনই চরম, পরম ও শাশ্বত, এমনকী গণতন্ত্রের মূল্যেও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.