|
|
|
|
বিদেশি সুরক্ষা-মোড়ক অমিল, দেরি পাসপোর্টে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে অনেক আগে। নিয়মমাফিক পুলিশি তদন্ত হয়ে গিয়েছে। সেই রিপোর্ট পাসপোর্ট অফিসে জমাও পড়েছে। তবু পাসপোর্ট হাতে পাননি খাস কলকাতার গৃহবধূ মুনমুন বসু এবং তাঁর মেয়ে চন্দ্রিমা। “কম্পিউটারে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পাসপোর্ট মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু কেন তা হাতে পাচ্ছি না, জানা নেই,” বললেন মুনমুনদেবী।
সমস্যাটা শুধু ওই মহিলার নয়। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ এবং সারা দেশে অনেক আবেদনকারীই পাসপোর্টের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছেন। পাসপোর্ট অমিল কেন? পাসপোর্ট দফতর জানাচ্ছে, পাসপোর্ট বইয়ের তথ্য ও ছবির সুরক্ষায় তা ল্যামিনেট বা মুড়ে দেওয়া হয় বিদেশি ল্যামিনেট পেপারে। সেই ল্যামিনেশন শিট ইতালি থেকে আসতে দেরি করছে। ওই ল্যামিনেশন পেপারের অভাবেই পাসপোর্ট বইয়ে সুরক্ষার মোড়ক দেওয়া যাচ্ছে না। তাই পাসপোর্টের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বহু আবেদনকারীকে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও ত্রিপুরারই ৪০ হাজার দরখাস্ত জমে গিয়েছে। পাসপোর্ট দফতর সূত্রের খবর, সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম-ত্রিপুরা মিলে দিনে গড়ে ১৫০০ পাসপোর্ট পাঠানো হয় আবেদনকারীদের ঠিকানায়। কিন্তু পাসপোর্ট বইয়ের অভাবে দেড় মাস ধরে দিনে ১৫০-র বেশি পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গোটা দেশে প্রায় তিন লক্ষ পাসপোর্ট আটকে রয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।
সমস্যা যে গভীর, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কলকাতার রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার গীতিকা শ্রীবাস্তব। তিনি জানান, আবেদনকারীর তথ্যাদি যে-বইয়ে লিখে পাসপোটর্র্ তৈরি হয়, সেটি আসে নাসিক থেকে। কিন্তু মাস দেড়েক ধরে সেই বইয়ের জোগান বড্ড অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তাই অনেক আবেদনপত্র জমে যাচ্ছে। গীতিকাদেবীর কথায়, “যাঁরা তৎকালে আবেদন করছেন, তাঁদেরও সকলকে পাসপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের মধ্যেও যাঁদের খুবই জরুরি প্রয়োজন, বাছাই করে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
দেশের মুখ্য পাসপোর্ট অফিসার তথা বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব এম কে পরদেশি বুধবার জানান, খালি পাসপোর্টের বই ছাপা হয় নাসিকের ইন্ডিয়া সিকিওরিটি প্রেসে। তার পরে নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন পৃষ্ঠায় ল্যামিনেশনের প্রয়োজন হয়। তার পরেই সেগুলি পাঠানো হয় বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে। ল্যামিনেশন শিট আসে ইতালি থেকে। সেটা যথেষ্ট পরিমাণে আসছে না কেন? পরদেশি বলেন, “সম্প্রতি ওই ল্যামিনেশন শিট আনার ব্যাপারে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী পাসপোর্ট বই ছাপা যাচ্ছে না।” ফলে আবেদনকারীদের হাতে যথাসময়ে তা পৌঁছেও দেওয়া যাচ্ছে না।
আবেদনকারীদের এই সমস্যা শুধু কলকাতা নয়, দেশের প্রায় সর্বত্রই। পরদেশি জানান, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ হাজার পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয় আবেদনকারীদের হাতে। এখন তা করা যাচ্ছে না। তাঁর আশ্বাস, শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে ল্যামিনেশন শিটের অপ্রতুলতা ছাড়াও পাসপোর্ট দিতে না-পারার পিছনে আর একটি কারণের কথা বলেছেন ওই পাসপোর্ট-কর্তা। তিনি জানান, কর্মীর অভাবও আবেদনকারীদের কাছে সময়মতো পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার পথে অন্যতম বাধা।
ল্যামিনেশন শিট নিয়ে জটিলতা কাটলে পাসপোর্ট বইয়ের জোগান বাড়বে ঠিকই। কিন্তু লোকাভাবের দরুন পাসপোর্ট-জটের সুরাহা কবে হবে, রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার গীতিকাদেবী তা নিয়ে
চিন্তায় আছেন। গীতিকাদেবী বলেন, “নাসিক থেকে নিয়মিত পাসপোর্ট বই আসা শুরু হলে তখন আবার আবেদনকারীর নানা তথ্য তাতে ছাপার জন্য কর্মীদের উপরে চাপ বাড়বে। তবে আবেদনকারীদের অসুবিধা যত তাড়াতাড়ি দূর করা যায়, আমরা সেই চেষ্টা অবশ্যই করব।” |
|
|
|
|
|