যাবজ্জীবন পৌরোহিত্যের ভার দণ্ডিত প্রমোদরঞ্জনকে
সুন্দর ঠাকুরঘর, ভেতরে মহাদেব ও গৌরাঙ্গের বিগ্রহ। সামনে নাটমন্দির। খোল-করতাল সবই আছে। আছেন গাইয়ে-বাজিয়েও। কিন্তু শিলচর সেন্ট্রাল জেলের এই মন্দিরে অভাব ছিল শুধু একজন পুরোহিতের। নিরাপত্তাজনিত কারণে বাইরে থেকে পুরোহিত আনা সম্ভব নয়। কারাবাসীদেরও কেউ মন্দিরের সারাক্ষণের দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত কাছাড় জেলার কাটিগড়ার বাসিন্দা প্রমোদরঞ্জন গোস্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সেই অভাব মিটিয়ে দিয়েছে।
মাসচারেক আগে প্রতিবেশী কুলেন্দ্র দাসকে খুনের দায়ে প্রমোদরঞ্জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাবাসের নির্দেশ দেয় শিলচর আদালত। মধ্যষাটের প্রমোদরঞ্জন পেশায় যাজক। বাবা-ঠাকুরদা দীক্ষা দিয়ে, শিষ্যদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জীবন কাটিয়েছেন। প্রমোদবাবুও অনেককে দীক্ষা দিয়েছেন। কুলেন্দ্র ছিলেন তাঁর শিষ্যদেরই একজন। কিন্তু জমিবিবাদের দরুন গুরু-শিষ্যের শত্রুতা চরমে পৌঁছয়। ছ’বছর আগে এক সকালে নিজের বাড়িতেই খুন হন কুলেন্দ্র। দু’পক্ষের বক্তব্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও শুনানির পর আদালত ‘গুরু’ প্রমোদবাবুকে শিষ্য-খুমের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। সেই থেকে শিলচর সেন্ট্রাল জেলই ঠিকানা হয়ে ওঠে প্রমোদরঞ্জনের। প্রথম ক’দিন মনমরা অবস্থায় পড়ে থাকতেন
তিনি। কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। তবে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত মন্দিরে যেতেন। আশার সঞ্চার হয় কারাবাসীদের মনে। এমন একজনেরই যেন অভাব বোধ করছিলেন তাঁরা। পুরনো কারাবাসী নীরেন চন্দ সকাল-সন্ধ্যা ঠাকুরপুজো দেন বটে, তবে তা গৃহস্থের মতো। পুরোহিত ছাড়া কি আর মন্দির পূর্ণতা পায়!
জেল সুপার তরুণচন্দ্র তালুকদারও বৃদ্ধ প্রমোদরঞ্জনের উপর নজর রাখছিলেন। তিনিই একদিন প্রমোদবাবুকে ডেকে মন্দিরের দায়িত্ব তাঁর হাতে সঁপে দেন। শেষ পর্যন্ত প্রাণ পেল ক’বছর আগে সেজে ওঠা জেলের মন্দির। প্রমোদরঞ্জনও মানসিক চাপ কাটিয়ে ক্রমশ স্বাভাবিক হতে থাকলেন। এখন শিব-গৌর তাঁর ধ্যানজ্ঞান। অন্য কারাবাসীরাও সেখানে গিয়ে পূজার্চনায় শরিক হন। সন্ধ্যায় তাঁর কাছে শোনেন ধর্মকথা। এর মধ্যে একদিন উদয়াস্ত কীর্তনের আসরও বসেছে। কারাবাসীদের বাড়িঘর থেকেই আসে পুজোর ফলমূল। প্রতিদিন প্রসাদ নিতে যান জেল সুপার। সঙ্গে অন্য অফিসার-কর্মীরাও।
বাড়িতে প্রমোদরঞ্জনের স্ত্রী, দুই পুত্র ও পুত্রবধূরা আছেন। জেলের মন্দিরে বসে তুলসী পাতায় চন্দন লাগাতে লাগাতে বললেন, “শুরুতে তাদের কথাই সারাক্ষণ মনে পড়ত। ভাবতাম, এ ভাবে কি বাঁচতে পারব? মন্দিরের দায়িত্ব পেয়ে মনে হচ্ছে, সাড়ে চারশোর বেশি কারাবাসী এই জেলে বেঁচে থাকতে পারলে, আমি কেন পারব না?” জেল সুপার তরুণবাবুর কথায়, “জেল এখন সংশোধনাগার। কেউ একবার ভেতরে ঢুকে গেলে সে খুনি, না ডাকাত, নাকি ছিঁচকে চোর তা দেখা হয় না। সবাই যাতে শোধরানোর সুযোগ পায় সে চেষ্টাই করা হয়। গোস্বামী ধর্মকথা শুনিয়ে অন্যদেরও শোধরানোর চেষ্টা করছেন, নিজেও শুধরোচ্ছেন। এ কি কম কথা!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.