পরবর্তী উপাচার্য বাছাই হয়নি বলেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্ন উঠেছে। আর স্থায়ী উপাচার্য বেছে নিতে তিন মাসই যথেষ্ট সময় বলে মনে করেন আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এটা মাথায় রেখেই মালবিকাদেবীর কার্যকাল তিন মাস বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, বুধবার পরিষ্কার জানিয়ে দেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগারে একটি আলোচনাসভার পরে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সাংবাদিকদের জানান, অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীকে উপাচার্য-পদে বহাল রাখার পরামর্শ মেন্টর গ্রুপকে দিয়েছিলেন তিনিই। তাঁর মতে, এতে প্রতিষ্ঠানেরই ভাল হবে। তার বদলে ওই মেয়াদ মাত্র মে পর্যন্ত বাড়ানোয় তিনি যে কিঞ্চিৎ ব্যথিত, ঘনিষ্ঠ মহলে তা-ও জানান অমর্ত্যবাবু। “উনি (অমর্ত্যবাবু) আমাকে কোনও পরামর্শ দেননি। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই”, বুধবার বলেন আচার্য-রাজ্যপাল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রবীন্দ্রভারতী উৎসব’-এর সূচনা অনুষ্ঠানের পরে আচার্য বলেন, “প্রেসিডেন্সির স্থায়ী উপাচার্য বেছে নিতে সার্চ কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা কাজ করছেন।” সার্চ কমিটিতে রাজ্যপালের মনোনীত সদস্য, ইউজিসি-র চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগও আছে বলে মন্তব্য করেন নারায়ণন। কিন্তু স্থায়ী উপাচার্য পেতে তিন মাসই কি যথেষ্ট? আচার্যের জবাব, “হ্যাঁ।”
রাজ্য সরকারেরও সুপারিশ ছিল, মালবিকাদেবীর কার্যকাল আট মাস (অক্টোবর পর্যন্ত) বাড়ানো হোক। সেই সুপারিশ না-মেনে আচার্য তিন মাস মেয়াদ বাড়িয়েছেন। এ দিন তিনি বুঝিয়ে দেন, অত সময়ের (আট মাস) প্রয়োজন নেই। পরবর্তী উপাচার্য বেছে নিতে তিন মাসই যথেষ্ট। অমর্ত্যবাবুর মত তাঁর জানা নেই, বলেছেন আচার্য।
প্রেসিডেন্সির উপাচার্য-পদে মালবিকাদেবীর থাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি। বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ১৫ অগস্টের পরে মালবিকাদেবী আর উপাচার্য থাকতে পারবেন না, এই যুক্তিতে নতুন উপাচার্য খুঁজতে উদ্যোগী হয় রাজ্য। কিন্তু আচার্যেরই হস্তক্ষেপে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালবিকাদেবীর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ বার জটিলতা তৈরি হয়েছে আরও এক দফা মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে। উপাচার্য খোঁজার জন্য সার্চ কমিটিও এখনও কাজ শুরু করেনি। তাই অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীকে রাখার সুপারিশ করেছিল সরকার।
উপাচার্যের নিয়োগকর্তা আচার্য মে মাস পর্যন্ত মালবিকাদেবীর মেয়াদ বাড়ানোর আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, অক্টোবর পর্যন্ত উপাচার্য থাকছেন মালবিকাদেবী। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ছিলেন সেই মঞ্চে। এখন সরকার বিষয়টি নিয়ে কী বলছে?
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল নিজের কথা বলেছেন। আর অমর্ত্য সেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয়। প্রেসিডেন্সির সঙ্গেও যুক্ত। উপাচার্যের কার্যকাল বৃদ্ধি নিয়ে তিনি যা বলেছেন, তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত।” |