‘নায়ক’ সিনেমায় অনিল কপূর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন এক দিনের জন্য। বুধবার মাত্র দু’ঘণ্টার জন্য কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক)-র দায়িত্ব নিল দশম শ্রেণির ছাত্রী অংশু হরিকুমার।
সিনেমায় অনিল কপূর এক দিনেই নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনে বদল আনতে চেয়েছিলেন। আর অংশু শহরের ট্রাফিক-ছবি বদলানোর ব্যাপারে নিজের মতামত জানিয়ে গেল পুলিশকর্তাদের। অল্পবিস্তর নির্দেশও দিল অফিসারদের।
শহরের ট্রাফিক কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে ২০১৩ সালে বিভিন্ন স্কুলে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল কলকাতা পুলিশ। তাতে জয়ী ছাত্রী অংশু হরিকুমারকে বুধবার ‘এক দিনের ডিসি (ট্রাফিক)’ হিসেবে সম্মান জানাল পুলিশ। বিষয়টি নেহাতই প্রতীকী হলেও এ নিয়ে সাজো সাজো রব ছিল লালবাজারে। বদলে গিয়েছিল ডিসি (ট্রাফিক)-র ঘরের ফলকও। অন্য দিন যেখানে দিলীপ আদকের নামের ফলক থাকে, এ দিন সেখানে ঝুলছিল অংশুর নাম। নতুন ডিসি-কে স্বাগত জানাতে করিডরে সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রাফিক বিভাগের অফিসার-কর্মীরা। বছর দেড়েক আগে এ ভাবেই এক দিনের জন্য নিউ টাউন থানার ওসি হয়েছিল ক্যানসার আক্রান্ত বছর আটেকের সুরজ বিনবংশী। |
বেলা ১১-১৫। লালবাজারের মূল ভবনের পোর্টিকোর সামনে দাঁড়িয়ে স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সৌমেন মিত্র, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার। এমন সময় এল গাড়ি। প্রথমে নামলেন ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক, পিছু পিছু অংশু। পরনে স্কুল ইউনিফর্ম, মাথায় হ্যাট। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা-মা এবং এক স্কুলশিক্ষিকা। গাড়ি থেকে নামতেই পুলিশকর্মীরা সেলাম ঠোকেন নতুন ডিসি-কে। এর পর পুলিশকর্তাদের সঙ্গে অংশু যায় কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থর ঘরে। সেখানে সুরজিৎবাবু অংশুকে স্বাগত জানান। তুলে দেন স্মারক। কমিশনার বলেন, “ছোটদের মধ্য দিয়েই সচেতনতার প্রসার করা হচ্ছে। এটা তারই অঙ্গ।”
বেলা ১১-৪৫। পুলিশকর্তাদের সঙ্গে ডিসি (ট্রাফিক)-র ঘরে ঢুকল অংশু। নতুন ডিসি-কে চেয়ার ছেড়ে দিলেন দিলীপ আদক। পুলিশি উর্দি ছাড়াই চেয়ারে বসল নতুন ডিসি। প্রশ্ন ধেয়ে এলসওয়া এগারোটায় অফিস এলেন? অংশুর উত্তর, “ডিসির দায়িত্ব নেব। তাই যানজটের অবস্থা দেখে এলাম।”
বেলা ১১-৫৫। ডিসি-র ব্যক্তিগত সহায়ক নীলেশ চৌধুরী ফোনে ধরলেন সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের ওসি অলোক সান্যালকে। বললেন, “ডিসি কথা বলবেন।” ফোনে অংশুর নির্দেশ, সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ড এলাকায় যানের চাপ বেশি। সেখানে কয়েকটি স্কুলও আছে। যাতে দুর্ঘটনা না হয়, নজর রাখতে হবে। |
এর পরেই শুরু হল সাংবাদিক বৈঠক। নতুন ‘ডিসি’ জানালেন, শহরে যানজট কাটানোই ট্রাফিক পুলিশের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। সময়ভিত্তিক সিগন্যাল ব্যবস্থা না রেখে, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যার উপর নির্ভর করে সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হবে। যত্রতত্র বাস দাঁড় করানো যাবে না।
বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ নিজের ঘর থেকে বেরোলো অংশু। সঙ্গে পুলিশের শীর্ষ-কর্তারা। তাঁদের সঙ্গেই সে ঢুকে গেল ট্রাফিক বিভাগের চার তলায় কন্ট্রোল রুমে। ভিতরে বিভিন্ন টেবিলে ঘুরে পুলিশকর্তারা তাঁকে বোঝালেন, কোথায়, কী ভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অংশু এ দিন জানায়, নয়া প্রজন্মের কাছে নতুন চিন্তাভাবনা মেলে। সেগুলি কাজে লাগানো যেতে পারে। পুলিশের এক শীর্ষ-কর্তা বললেন, “এক দিনের ডিসি ব্যাপারটা নেহাতই প্রতীকী। তবে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে চিন্তাভাবনার রসদ নেওয়ার বার্তাটা দেওয়া হল।”
বেলা ১টা। সময় শেষ। দিলীপবাবুকে দায়িত্ব সঁপে দিল অংশু। চেয়ার ফিরে পেলেন পুরনো ডিসি (ট্রাফিক)। যাওয়ার আগে অংশু এ দিন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে পুলিশে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার। সিনেমায় অনিল কপূর ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ভবিষ্যতে আইপিএস হয়ে অংশু সত্যিকারের ডিসি (ট্রাফিক) হতেই পারে। |