২৪ ঘণ্টা পার করে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেও হামলার আতঙ্ক কাটছে না সল্টলেকে আক্রান্ত আমলার পরিবারের। বাড়ি ফিরে ওই আমলার ছোট মেয়েটি শুধু বলেছে, ‘কাকু মেরেছে’। শুধু তিন বছরের ওই শিশুই নয়, আচমকা এই হামলার কোনও কারণই স্পষ্ট হয়নি পরিবারের কাছে।
কে এই ‘কাকু’?
সল্টলেকে আক্রান্ত ওই আমলার স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, হামলার জেরে জ্ঞান হারানোর আগে তিনি বছর পঁচিশের এক যুবককে লক্ষ করেছিলেন। রোগা, ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির ওই যুবকই তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছিল বলে অনুমান ওই মহিলার। চলতি সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবার পরপর দু’দিন সল্টলেকে ওই আমলার পরিবারের উপর হামলা হয়। প্রথম দিন অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল এক মহিলার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দিন এক যুবকের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে দু’টি ঘটনায় বুধবারও ধন্দে ছিল পুলিশ। রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে আমলার স্ত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী সম্ভাব্য দুষ্কৃতীর ছবি আঁকা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সল্টলেকের পুলিশকর্তারা। আনা হয় পুলিশ কুকুর। বুধবার রাত পর্যন্ত একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বুধবার বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, দুটি ঘটনাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সল্টলেক (দক্ষিণ) থানাকে সহযোগিতা করছে গোয়েন্দা দফতর।
তবে কেন এই হামলা, তা স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। গোয়েন্দাপ্রধান জানান, সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আক্রান্ত পরিবার এখনও আতঙ্কগ্রস্ত। পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
কোথায় রহস্য?
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরে সল্টলেক দক্ষিণ থানার আইসির কাছে হামলার খবর যায়। কিন্তু তার আগে কতক্ষণ ধরে সল্টলেকের সরকারি আবাসনে ওই আমলার ফ্ল্যাটে ঘটনাটি ঘটে, কিংবা ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে পরিবারের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে।
পুলিশ জেনেছে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। আমলার স্ত্রীর বর্ণনা অনুসারে, একটি ঘরে তাঁর ছোট মেয়ে শুয়েছিল, অন্য ঘরে ছিল তাঁর বড় মেয়ে ও বছর পনেরোর পরিচারিকা। তিনি বাইরের ঘরে ছিলেন। তখনই কলিং বেল বাজলে দরজা খুলে তিনি দেখেন বাইরে কেউ নেই। আবাসনের নীচ থেকে কেউ বেল বাজিয়েছে ভেবে বারান্দায় গিয়েও কাউকে দেখেননি। বারান্দা থেকে ফিরে দরজার কাছে যেতেই বিষাক্ত গন্ধ পান তিনি। গা গুলিয়ে ওঠে। ফের বেল বাজে। ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
ওই মহিলা জানান, দ্বিতীয় বার ঘরে বিষাক্ত গন্ধের তীব্রতা বাড়ে। ফের বেল বাজলে দরজার কাছে যেতেই কেউ বাইরে থেকে সজোরে খুলে দেয়। ছিটকে পড়েন তিনি। এর পরেই দুষ্কৃতী সম্ভবত হাত দিয়ে মারে তাঁর কপালে। জ্ঞান হারান তিনি। খানিকটা থিতু হওয়ার পরে খেয়াল হয় ছোট মেয়ে ঘরে নেই।
যদিও পুলিশ আসার আগেই আবাসনের একতলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পীতাম্বর মল্লিক তিন বছরের শিশুটিকে খুঁজে পান। তিনি জানান, ছাদের কাছে যেতেই শিশুটির গোঙানির শব্দ পান। আমলার ওই ফ্ল্যাট থেকে কাথা-কম্বল জড়িয়েই মেয়েটিকে ছাদে নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতী। সেখানে শিশুটিকে মারধর করা হয়েছিল বলেও অনুমান আমলার স্ত্রীর।
শিশুটির উপর হামলার তথ্য পেতে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট তলব করেছে পুলিশ। পাশাপাশি প্রথম দিন অপহরণের চেষ্টার অভিযোগের ক্ষেত্রেও একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও সূত্র মেলেনি।
বুধবার রাজ্য ও পুর প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। হাই প্রোফাইল ওই সরকারি আবাসনের বেহাল নিরাপত্তার কথা পদস্থ কর্তাদের জানানো হয়েছে। সল্টলেকের বিভিন্ন সরকারি আবাসনের নিরাপত্তার দশা কমবেশি একই রকমের বলে অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল ফেরাতে পুলিশ প্রশাসনও ফের তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। |