শেষ রক্ষা হল না। বড়জোড়ার খাড়ারি গ্রামের ধান জমিতে অসুস্থ হয়ে পড়া হাতিটি শেষে মারাই গেল। তার আগে মায়ের গায়ে শুঁড় বুলিয়ে আদর করে দলে ভিড়ে গেল ওই হাতির বাচ্চাটি। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরের দিকে হাতিটির মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তে ধরা পড়েছে, মৃত হাতিটি গর্ভবতী ছিল। তার পেটে ছিল তিন মাসের একটি ভ্রূণ।
হাতিটির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা পশু চিকিৎসক সঞ্জয় শীট বলেন, “হাতিটির গর্ভাবস্থা চলছিল। পেটে কৃমি হওয়ায় অস্বস্তির জেরে হাতিটি অনেকখানি মাটি খেয়ে ফেলে। তাতেই বিপদ। মাটি পেটের ভিতর গিয়ে জমাট বেঁধে যাওয়ায় হাতিটির পেটে খাদ্য চলাচল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে হাতিটি মারা যায়।” ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, তার গর্ভে থাকা ভ্রূণটি প্রায় মাস তিনেকের।
সোমবার সকাল থেকেই ধান খেতে পড়ে থাকা অসুস্থ হাতিটিকে ঘিরে রেখেছিল তার চার বছরের বাচ্চাটি। দৃশ্যটি দেখতে হাজার হাজার গ্রামবাসী জড়ো হয় সেখানে। বাচ্চাটির ভয়ে অসুস্থ হাতিটির কাছে ঘেঁষতে পারছিলেন না বনদফতরের কর্মী ও চিকিৎসকেরা। এক গ্রামবাসী বাচ্চা হাতিটিকে সেখান থেকে তাড়াবার জন্য জ্বলন্ত হুলা ছুড়ে মারে বাচ্চা হাতিটির মুখে। রেগে গিয়ে গ্রামজুড়ে তাণ্ডব শুরু করে হস্তিশাবকটি। শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে দু’জন গ্রামবাসীকে। ঘরও ভেঙে দেয়। পায়ে করে পিষে দেয় সাইকেল। হুলা পার্টির কর্মীদের সাহায্যে শিশু হাতিটিকে কোনও রকমে খাড়ারির জঙ্গলে আটকে রেখে অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসা শুরু করে বনদফতর।
রাতের অন্ধকারে বেশিক্ষণ অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসা চালানো যায়নি। হাতিটির উপর লক্ষ রাখছিলেন বনকর্মীরা। ওই বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, প্রায় মাঝরাতে অসুস্থ হাতিটির বাচ্চাটি দলের অন্যদের নিয়ে সেখানে ফিরে আসে। বাচ্চা হাতিটি বেশ কিছুক্ষণ তার অসুস্থ মায়ের গায়ে শুঁড় বোলায়। কিছুক্ষণ পরে ওই বাচ্চা হাতিটিকে নিয়ে সাহারজোড়ার জঙ্গলে ফিরে যায় হাতির পালটি। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, যাওয়ার পথে কয়েক বার পিছনে ফিরে তাকায় শিশু হাতিটি। সকালে বনকর্মীরা দেখেন হাতিটি মারা গিয়েছে। বড়জোড়ার রেঞ্জ আধিকারিক মোহন শীট বলেন, “মৃত হাতির দেহটি বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসে নিয়ে এসে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে তার দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।” |