ধড়-মুণ্ড জুড়ে যুবকের প্রাণরক্ষা
যেন আরব্য রজনীর ইচ্ছাপূরণের গল্প! তবে এই গল্পে কেরামতি কোনও আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্যের নয়। এর কৃতিত্ব জেলা হালপাতালের একদল চিকিৎসকের। যাঁরা হাসপাতালের স্বল্পতম পরিকাঠানোর মধ্যেই নিজেদের সেরাটুকু দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন বছর চল্লিশের এক যুবককে।
ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ধারালো অস্ত্রের কোপে গলা কেটে দেওয়া হয়েছিল বছর চল্লিশের প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে। সেখানে জটিল অস্ত্রোপচার করা হয় প্রসেনজিতের। তিন সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে প্রসেনজিৎ এখন সুস্থ। গত রবিবার সেলাই কাটাতে হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। প্রসেনজিতের কথায়, “ডাক্তারবাবুরা আমার ঈশ্বর। ওঁদের জন্যই এ যাত্রায় প্রাণে বাঁচলাম। ওঁদের ঋণ কোনওদিনই শোধ করতে পারব না।” আর ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার স্বপন সরেন বলেন, “সরকারি হাসপাতালেও যে জটিল অস্ত্রোপচার হয়, সেটা আমাদের চিকিৎসকেরা করে দেখিয়েছেন। এটা ওই চারজন চিকিৎসকের টিম ওয়ার্কের ফল।”

এখন প্রায় সুস্থ প্রসেনজিৎ।
ঘটনাটি গত ৪ জানুয়ারির। ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ শহরের একটি মেয়েদের স্কুলের অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সে দিন সন্ধ্যায় প্রসেনজিৎকে একা পেয়ে খুর চালিয়ে তাঁর গলা কেটে দেয় এক যুবক। প্রসেনজিতের সারা শরীরে খুর দিয়ে আঘাত করা হয়। পুলিশ জানায়, টাকা পয়সা সংক্রান্ত ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে প্রসেনজিতের উপর হামলা চালায় লুলু সিংহ নামে এক মাছ বিক্রেতা। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রসেনজিতের গলা কেটে দেওয়া হয়েছিল। গলার পিছন দিকে মাত্র ৬ সেন্টিমিটার অংশ জুড়ে ছিল। বাদবাকি কাটা গলাটা ঝুলে ছিল। শ্বাসনালী চার খণ্ড হয়ে গিয়েছিল। গলা কাটা অবস্থায় অর্ধমৃত প্রসেনজিৎকে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। প্রসেনজিতের বাঁচার কথা ছিল না।
হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক গৈরিক মাজি বলেন, “যে অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাতে অস্ত্রোপচারটা খুবই ঝুঁকির ছিল। আমরা ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রসেনজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। রাত ৮ টায় জটিল অস্ত্রেপচার শুরু হয়। অপারেশন টিমে গৌরিকবাবুর সঙ্গে ছিলেন অ্যানাস্থেটিস্ট প্রসূন ঘোষ, ইএনটি বিশেষজ্ঞ তপনকুমার ভৌমিক, দন্ত বিশেষজ্ঞ অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, প্রসেনজিতের গলার সঙ্গে শ্বাসনালী কাটা গিয়েছিল। তবে খাদ্যনালী ও ভোক্যাল কর্ডের ক্ষতি হয় নি। কিন্তু ওই অবস্থায় স্বরযন্ত্র ও মুখের স্নায়ুকে বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার করাটাই রীতিমতো ঝুঁকির ছিল। চার ঘন্টা ধরে জটিল অপারেশন করে প্রসেনজিতের কাটা মুণ্ড জোড়া লাগানো হয়। শরীরের বিভিন্ন কাটা জায়গাগুলিও অপারেশন করে ঠিক করা হয়। কাটা শ্বাসনালী জোড়া লাগানোর ফলে নাক দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার উপায় ছিল না। সেজন্য প্রসেনজিতের গলায় লাগানো হয় মেটালিক ট্র্যাকিওস্টমি টিউব। প্রায় তিন সপ্তাহ ওই টিউবের মাধ্যমেই শ্বাসপ্রশ্বাস নেন প্রসেনজিৎ। ৩০ জানুয়ারি প্রসেনজিৎকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রসেনজিৎ স্কুলের কাজে যোগ দিয়েছেন।

ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের সুপার-সহ চার কৃতী চিকিৎসক।
ঝাড়গ্রাম থানার এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে আমরা ভেবেছিলান, জখম ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের তৎপরতায় যে ভাবে ওই ব্যক্তি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন, তা বাস্তবে খুব কমই হয়।” বৃদ্ধ বাবা-মা এবং স্ত্রী ও ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে প্রসেনজিতের সংসার। প্রসেনজিতের স্ত্রী মানসীদেবীর কথায়, “ঘটনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। সবাই বলেছিল কলকাতায় বেসরকারি বড় হাসপাতালে স্বামীকে নিয়ে যেতে। অভাবের সংসারে কলকাতার বেসরকারি বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। জেলা হাসপাতালে এমন চিকিৎসা পাব আমরা ভাবিনি।”

ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

পোলিও নিয়ে বৈঠক
এ বার একশো শতাংশ শিশুকে পোলিও খাওয়াতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আগের বার শেষ পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ বাচ্চাকে পোলিও খাইয়েই কর্মসূচী শেষ হয়েছিল। সোমবার জেলা পরিষদ লাউঞ্জে স্ট্যাণ্ডিং কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি সাধারণ প্রশাসন, জেলা পরিষদ-সবাই উপস্থিত ছিলেন। এদিনের বৈঠকে আগেরবার কেন একশ শতাংশ বাচ্চাকে পোলিও খাওয়ানো যায়নি তার পর্যালোচনা করা হয়। এবার পোলিও ২৩ তারিখ। আগে থেকেই জেলার সর্বত্রই পোলিও নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি ২২-২৮ তারিখ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি ব্লকেই যে মেলা চলবে সেই মেলাতেও পোলিও খাওয়ানোর জন্য স্বাস্থ্য কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা জানিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.