অ্যাসিড দিয়ে তালা গলিয়ে বাড়িতে ঢুকে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে-গুলি করে লুঠপাট চালাল ডাকাতেরা। রায়দিঘির মুখার্জিপাড়ার এই ঘটনায় সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশ দুই প্রতিবেশীকে গ্রেফতার করেছে। ডাকাত দলে আরও জনা দশেক লোক ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে। আক্রান্তেরা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি।
রবিবার গভীর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে কাপড়ের ব্যবসায়ী দীনবন্ধু নস্করের বাড়িতে ডাকাত পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দীনবন্ধুবাবু ও তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দোতলা বাড়ির নীচের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। উপরের ঘরে একা শুয়েছিলেন তাঁদের ছোট মেয়ে, বছর কুড়ির রিঙ্কু। তাঁর অভিযোগ, রাত দেড়টা নাগাদ অ্যাসিড দিয়ে সদর দরজার তালা গলিয়ে পাঁচ-ছ’জন দুষ্কৃতী উঠোনের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠে। বাকিরা বাইরে পাহারা দিচ্ছিল। প্রত্যেকের মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা ছিল। রিঙ্কুকে মারধর করে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায় দুষ্কৃতীরা। |
ইতিমধ্যে পায়ের শব্দে জেগে যান দীনবন্ধুবাবুরা। তাঁদের অভিযোগ, সরস্বতীদেবী উপরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তিন-চার জন তাঁর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বাইরে রিঙ্কুর ঘরের শিকল তুলে দেয় তারা। দীনবন্ধুবাবু দুষ্কৃতীদের ঘরে ঢুকতে বাধা দিলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর স্ত্রীর মাথায় কোপ মারে। দীনবন্ধুবাবুর দিকে পরপর দু’টো গুলিও ছোড়ে। তিনি লুটিয়ে পড়েন। স্বামীকে খুন হয়ে যেতে পারেন বুঝে সরস্বতীদেবী দুষ্কৃতীদের পা জড়িয়ে ধরে আলমারির চাবি দিয়ে দেন।
এর পরে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে লুঠপাট চালিয়ে নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। সরস্বতীদেবীর পড়শি তথা তাঁর জা কৃষ্ণাদেবী বলেন, “বৃষ্টির রাত বলে প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি। পরে রিঙ্কুর চিৎকার শুনে ছুটে যাই। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন আমার ভাসুর ও জা। প্রতিবেশীদের সাহায্যে ওঁদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাই।” দীনবন্ধুবাবু ও সরস্বতীদেবীকে প্রথমে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দীনবন্ধুবাবুকে পরে ডায়মন্ড হারবারে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে শুয়ে সরস্বতী দেবী বলেন, “মুখে কাপড় বাঁধা থাকলেও আমরা দু’জনের গলার স্বর চিনতে পেরেছিলাম। সেই মতো পুলিশকে জানাই।”
সোমবার দুপুরে দুই প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন রিঙ্কু। তার ভিত্তিতেই জয়দেব নস্কর ও ফটিক হালদার নামে দুই প্রতিবেশীকে ধরেছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “দলে দশ থেকে বারো জন ছিল। বাকিদের খোঁজ করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে আমাদের অনুমান, পুরনো পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা।” |