উরসে একাকার দুই বাংলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শুরু হল উরস উৎসব। প্রথা মেনেই সোমবার সকালে মেদিনীপুরে এসে পৌঁছল বাংলাদেশের বিশেষ ট্রেন। এ বার উরসে যোগ দিতে ওপার বাংলা থেকে রেকর্ড সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষকে নিয়ে মেদিনীপুরে পৌঁছল উরস উৎসবের বিশেষ ট্রেন। আজ, মঙ্গলবার রাত ন’টা নাগাদ ট্রেনটি ফের বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেবে। বিশেষ ট্রেনটি মেদিনীপুরে পৌঁছনোর পর ওপার বাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষদের স্টেশন চত্বরে তাঁদের ফুল-মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান প্রণব বসু, উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী প্রমুখ।
উরস উৎসবে যোগ দিতে প্রতিবার বাংলাদেশ থেকে মেদিনীপুরে বিশেষ ট্রেন আসে। তবে, এ বার ট্রেনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এসেছেন। ২০১৩ সালে এসেছিলেন ১৯০৪ জন। ১০৭৫ জন পুরুষ, ৭৬২ জন মহিলা এবং ৬৭ জন শিশু। এ বার এসেছেন ২০০১ জন। ১১০৫ জন পুরুষ, ৮২৫ জন মহিলা এবং ৭১ জন শিশু। |
|
বাংলাদেশ থেকে উরসের ট্রেন এল মেদিনীপুরে। —নিজস্ব চিত্র। |
বাংলাদেশ থেকে আসা এ বারের দলে রয়েছেন মহম্মদ জাকির হোসেন। তিনি বলছিলেন, “এই দিনটিতে মেদিনীপুরে না আসতে পারলে মন খারাপ লাগে। বাংলাদেশের বহু মানুষ এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।” শুধু ওপার বাংলা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং এমনকী ভিন্ রাজ্য থেকেও বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ মেদিনীপুরে এসেছেন। শহরের জোড়া মসজিদে প্রতি বছরই এই দিনটি পালন করা হয়। সুফি সাধকের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে আসেন। জোড়া মসজিদের পাশে মেলাও বসে। এ বারও ছবিটার এতটুকু হেরফের হয়নি। সোমবার সকাল থেকে মেলা চত্বরে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সেই দিকে নজর রেখে কিছু পদক্ষেপও করেছে মেদিনীপুর পুরসভা। |
|
উরস উৎসব উপলক্ষে মেদিনীপুর শহরের জোড়া মসজিদের
মাজারে ফুল দেওয়ার লাইন। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “মেলা চত্বরে ক্যাম্প রয়েছে। আমরা পর্যাপ্ত আলো-পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছি। বিভিন্ন এলাকার ক্যাম্প থেকে জলের পাউচ দেওয়া হচ্ছে।”
উপ-পুরপ্রধান বলছিলেন, “আমরা ধর্মপ্রাণ মানুষদের ফুল-মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধিত করেছি। ফিরে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার রাতেও ওঁদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। আসলে বাংলাদের প্রতি বরাবর আমাদের একটা আলাদা টান রয়েছে।” একই মত শহরের রাজেশ হোসেনের। তিনি বলেন, “ওপার বাংলার সঙ্গে এপার বাংলার একটা আত্মীক যোগ রয়েছে।” মেলা চত্বরে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। এলাকায় বাড়তি পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সব সময় নজরদারি চলছে। মেডিক্যাল ক্যাম্পও খোলা হয়েছে। উরস উৎসব উপলক্ষে সেই ১৯০২ সাল থেকে বাংলাদেশের বিশেষ ট্রেন আসে মেদিনীপুরে। |
|
উরস মেলায় মিষ্টির পসরা। |
ধর্মপ্রাণ মানুষদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ভারত-বাংলাদেশ, এই দুই দেশের উদ্যোগে ট্রেন চলে। উৎসবের ক’টা দিন যেন দুই বাংলা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এ বার রেকর্ড সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ আসায় জমে উঠেছে মেলা। খুশি বিক্রেতারাও। বাংলাদেশের সঙ্গে মেদিনীপুরের সম্পর্কের অবশ্য আরও একটি দিক রয়েছে। অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠাতা সহিদ হাসান সুরাবর্দির জন্ম এই মেদিনীপুর শহরেই। সুফি সাধক হজরত সৈয়দ শাহ মুর্শিদ আলি আল কাদেরি আল বাগদাদির (মওলা পাকের) উরস সোমবার যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে। তাঁর প্রপৌত্র সাজ্জাদানসীন (স্থলাভিষিক্ত) বড় হুজুর, সৈয়দ শাহ রশিদ আলি আল কাদেরি আল বাগদাদির পরিচালনায় তা পালিত হয়। |
|