|
|
|
|
সৌজন্যে ভোট |
ভোটের দৌলতে মোবাইল পরিষেবা প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলে |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
সামনে লোকসভা নির্বাচন। আর তারই দৌলতে এ বার মোবাইল পরিষেবার হাল ফিরতে চলেছে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে তৎপর হয়েছেন বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপনে আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী মোবাইল পরিষেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করে। এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে অবশ্য ছবিটা একেবারে আলাদা। কিছু কিছু এলাকায় বেসরকারি সংস্থার নেটওয়ার্ক থাকলেও বিএসএনএলের নেটওয়ার্ক ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোটের কাজকর্মের অনেকটাই মোবাইল এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হবে। তাই জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় পরিষেবা পৌঁছে দিতে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তারপর ‘শ্যাডো জোন’ (যেখানে নেটওয়াক নেই)-এ পরিষেবা পৌঁছে দিতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিএসএনএলের খড়্গপুর ডিভিসনের জেনারেল ম্যানেজার মীরা মার্দি বলেন, “সব এলাকায় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ারই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। কমিশন যেমন জানাবে, প্রথমে সেই কাজ করা হবে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে সব বুথকে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তার বাইরে কোনও এলাকা থেকে গেলে পরবর্তীকালে সেখানেও পরিষেবা পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে।
বিএসএনএলের পক্ষ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই জানতে চাওয়া হয়েছিল জেলার কতগুলি বুথ ও সেক্টর অফিস নেটওয়ার্কের বাইরে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০০টি বুথ ও ১৭ সেক্টর অফিস নেটওয়ার্কের বাইরে বলে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও নির্দিষ্ট করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও তেমন সমস্যা দেখলেই বিএসএনএলকে জানানো হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “আমরা বিএসএনএলকে প্রাথমিক ভাবে একটি রিপোর্ট দিয়েছি। তাতে কিছু বুথ ও সেক্টর অফিসের উল্লেখ রয়েছে। নতুন করে আরও এরকম শ্যাডো জোন পেলে ফের জানাব।”
বিএসএনএল সূত্রে খবর, প্রত্যেক এলাকায় টেলিকম দফতরের পরিকাঠামো রয়েছে। তবে সর্বত্র পরিকাঠামো যথাযথ নয়। তাই প্রথমে খতিয়ে দেখা হবে যেখানে বিএসএনএলের টাওয়ার রয়েছে, সেখানে তার সক্রিয়তা কতটা। তাছাড়া যেখানে ল্যান্ডলাইন পরিষেবা রয়েছে, সেখানে ইন্টারনেটের সুবিধে মিলছে কিনা দেখে প্রয়োজনে তার ব্যবস্থা করা হবে। বিএসএনএলের এক কর্তার কথায়, “বর্তমানে যে শ্যাডো জোন রয়েছে তার দু’দিকে দু’টি টাওয়ার রয়েছে। দু’দিকের দু’টি টাওয়ারে কিছুটা সক্রিয়তা বাড়িয়ে দিলেই ওই এলাকাটি নেটওয়ার্কের আওতায় এসে যাবে। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ও ইন্টারনেট দু’ধরনের পরিষেবাই মিলবে।” এ ছাড়া রয়েছে ওয়াই ম্যাক্স। এ ক্ষেত্রে একটি টাওয়ার বসালে চারপাশের ৮-১০ কিলোমিটার এলাকায় সহজেই ইন্টারনেট পরিষেবা মিলবে।
জঙ্গলমহলে মোবাইল ব্যবহারকারী মানুষজনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। চা বিক্রেতা, সব্জি বিক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ চাষিও এখন মোবাইল ব্যবহার করেন। কিন্তু বেশিরভাগ এলাকাতেই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। পরিস্থিতি এমন যে নেটওয়ার্ক পেতে গাছের উঁচু ডালেও অনেকে মোবাইল ফোন রাখেন। গাছের উপরে উঠেই কথা বলতে হয়। না হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে যে! বিএসএনএল সূত্রে জানা গিয়েছে, একটা সময় মাওবাদী সক্রিয়তার জন্য জঙ্গলমহলের বেশ কিছু এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। কিষেনজির মৃত্যুর পরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপ থিতিয়ে গিয়েছে। ফলে, আগের মতো ভোটের সময় প্রত্যন্ত এলাকার বুথ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই বলে পুলিশের দাবি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্দিষ্ট জায়গাতেই বুথ হয়েছিল। এ বার লোকসভা ভোটের পালা। তার আগেই যাতে প্রতিটি বুথ ও সেক্টর অফিসকে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সে জন্য বিএসএনএলকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএসএনএলের জেনারেল ম্যানেজারের আশ্বাস, “প্রথমে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হবে। তারপর ধীরে ধীরে সমস্ত শ্যাডো জোনেই আমরা পরিষেবা পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ করব।” |
|
|
|
|
|