মাস দুয়েক আগেও ছবিটা ছিল অন্য রকম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র ঘোষণা হওয়ার পর ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমের গণ ধারণা ছিল: বার্সেলোনা ভয় পাচ্ছে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবার দুই ক্লাবের লড়াইয়ের ২৪ ঘণ্টা আগে সেই ছবিটাই বদলে গিয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটা ম্যাচে ছন্দহীন দেখাচ্ছে ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনির ম্যান সিটিকে। উল্টো দিকে মেসির বিস্ফোরক ফর্মে ছুটছে বার্সেলোনার রথ।
গত শনিবার এফএ কাপে চেলসিকে ২-০ হারালেও, বিশেষজ্ঞদের মতে ম্যান সিটির মরসুম শুরুর দাপট ক্রমশ ম্লান হচ্ছে। সিটির সবচেয়ে বড় সমস্যা, সের্জিও আগেরোর না থাকা। প্রিমিয়ার লিগে চেলসির সঙ্গে হেরে আর নরউইচ সিটি ম্যাচ ড্র করার পর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, আগেরো না থাকলে কি সিটির ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’ হারিয়ে যায়? ম্যাচের এক দিন আগে চোটে কাবু সেই আগেরোই। আগের দিনও অনুশীলন করতে পারেননি সিটির তারকা স্ট্রাইকার। বার্সেলোনা ম্যাচে মেসির সতীর্থকে দলে রাখবেন না, সে কথা এ দিন ঘোষণাই করে দিয়েছেন পেলেগ্রিনি। বলেন, “আমি ধরে নিয়েছিলাম আগেরো খেলতে পারবে না। সেটাই হল। আশা করছি স্টোক সিটি ম্যাচে ও ফিরবে।” কিন্তু আগেরো দলে না থাকলেও বার্সেলোনার সঙ্গে হাইভোল্টেজ ম্যাচে দলে ফিরতে চলেছেন সিটির মিডফিল্ড-জেনেরাল ফার্নান্দিনহো। |
ম্যাঞ্চেস্টার পৌঁছলেন মেসিরা।
|
এক দিকে ম্যান সিটির যখন ছন্দপতন ঘটেছে, বার্সেলোনা ফিরে পেয়েছে তাদের বিধ্বংসী ফর্ম। শনিবার রায়ো ভালেকানোকে ৬-০ উড়িয়ে বাসের্লোনা বুঝিয়ে দিয়েছে, তিকি-তাকা আবার স্বমহিমায়। চোট থেকে ফিরে আসার পর মেসিকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ছিল যে মহাতারকার আধিপত্য কি ফুরিয়ে আসছে বিশ্বফুটবলের মঞ্চে? কিন্তু শেষ তিন ম্যাচে পাঁচ গোল করে মেসি প্রমাণ করেছেন যে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি আবার জেগে উঠেছে। ম্যান সিটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও, এলএম টেন জানিয়ে দিলেন যে বার্সাই ফেভারিট। “দারুণ লাগছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় খেলতে পেরে। এই মরসুমে আমরা ফাইনালে ওঠার ক্ষমতা রাখি।” আরও একটা ব্যাপারে ম্যান সিটিকে সতর্ক করে রাখলেন বার্সার মহাতারকা। নতুন বুট পায়ে সিটি রক্ষণকে নাজেহাল করার প্ল্যান নিয়ে মাঠে নামছেন মেসি। যে বুটের পোশাকি নাম অ্যাডিজিরো এফ৫০। ফুটবল মহলে পরিচিতি ‘রামধনু বুট’ হিসাবে। যা নিয়ে মেসি বলছেন, “নতুন আডিডাস বুট পরে এই ম্যাচে খেলব। আশা করি, নতুন বুটে সমর্থকদের হতাশ করব না।” |
মহারণের আগে যেমন আছে টানটান উত্তেজনা, তেমনই রয়েছে বাগযুদ্ধও। সিটি-তে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া প্লেয়ার তেমন না থাকা নিয়ে জাভি যেমন কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, “আমাদের টিমে কাতালুনিয়ার ফুটবলার না থাকলে সমর্থকদের ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ হবে না। আমি জানি না যে ম্যান সিটিতে ঘরের ছেলে নিয়ে দল সাজানোর প্রথা আছে কি না। আজকাল তো ফুটবল ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” জাভির তির, ম্যাঞ্চেস্টারের ভাড়াটে সৈন্যদের দিকে।
বার্সেলোনাকে আবার পাল্টা জবাব দিয়ে মেসির এক সময়কার সতীর্থ এবং সিটির বর্তমান তারকা ইয়াইয়া তোরে বলেন, “আমি বার্সেলোনাকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু ওখানে আমার খেলার স্বাধীনতা ছিল না। মাঝমাঠেই দাঁড়িয়ে থাকতে হত। ম্যান সিটিতে আমি উপরে উঠে গেলেও কোনও সমস্যা হয় না।”
মহাতারকাদের এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কারা জিতবেন, জানা যাবে আর ২৪ ঘণ্টা পর। |
পেলেগ্রিনি বনাম মেসি |
• ম্যাচ ১৭, বার্সেলোনার জয় ১২, হার ৩, ড্র ২। মেসির গোল ১০ (জোড়া হ্যাটট্রিক)
কোচিং ‘ম্যানুয়েল’-এ
• ২০০৪-’০৯ ভিয়ারিয়াল। সাত ম্যাচে মেসি কোনও গোল পাননি।
• ২০০৯-’১০ রিয়াল মাদ্রিদ্র। দু’বারই জেতে বার্সা। মেসির গোল ১।
• ২০১০-’১৩ মালাগা। আট ম্যাচে ৭ বারই জয় বার্সার। দুটো হ্যাটট্রিক সহ মোট ৯ গোল মেসির।
শেষ ষোলোয় গত সাত মরসুমে তিন বার প্রথম লেগে হার বার্সার। ২০০৬-’০৭ লিভারপুলের (১-২) কাছে। ২০১০-’১১ আর্সেনাল (১-২) আর ২০১২-’১৩ এসি মিলানের (০-২) কাছে। |
|