দলমার হাতির আক্রমণে জখম পুর্ণিমা লোহারা ও তাঁর শিশুকন্যা লক্ষ্মীর শারীরিক অবস্থা খুব ভাল নয়। শনিবার রাতে বড়জোড়ার মুক্তাতোড় গ্রামের লোহারাপাড়ায় দফায় দফায় তাণ্ডব চালায় হাতির পাল। তাদের আক্রমণে ভেঙে পড়ে পুর্ণিমাদেবীর ঘরের দেওয়াল। তাতে চাপা পড়ে মারা যায় ওই মহিলার সাত ছেলে আশিস লোহারা। গুরুতর জখম অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয় পূর্ণিমাদেবী ও লক্ষ্মীকে। ওই রাতেই হাতির হামলায় দেওয়াল চাপা পড়ে জখম হয় পাড়ার আর এক শিশু আকাশ লোহারা। তবে, বড়জোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তাকে সোমবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত সে ভাল আছে বলে তার পরিবার সূত্রের খবর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইটের দেওয়াল চাপা পড়ে কোমরের হাড় ভেঙেছে পূর্ণিমাদেবীর। ছোট্ট লক্ষ্মীর ভেঙেছে বাঁ পায়ের হাড়। দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। পূর্ণিমাদেবীর স্বামী শঙ্কর লোহারার আক্ষেপ, “বেতের ঝুড়ি তৈরি করি আমি। আমার স্ত্রী সেগুলো গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে। এ ভাবেই দিন কাটত আমাদের। হাতির আক্রমণে ছেলেকে চিরদিনের জন্য হারালাম। এখন বউ-মেয়ে কোনও দিন হাঁটতে পারবে কি না, তা-ও ডাক্তাররা বলতে পারছেন না। এই অবস্থা থেকে কী করে ঘুরে দাঁড়াব জানি না।” |
সোমবার খাড়াড়ি গ্রামে বাচ্চা হাতির তাণ্ডবের নমুনা।—নিজস্ব চিত্র। |
সাহারজোড়ার জঙ্গল থেকে সোমবারও সরানো যায়নি হাতির বিশাল পালটিকে। এমনিতে হাতির উপদ্রবে উত্তেজনা ছিলই মুক্তাতোড় গ্রামে। শনিবারের ঘটনার পর সেই উত্তেজনা গ্রামবাসীদের ক্ষোভের চেহারা নিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে সাহারজোড়া জঙ্গল লাগোয়া এই গ্রামটির দিকে ফের মোড় নিয়েছে হাতির দল। ময়াল বাউরি, ভোলানাথ লোহার, প্রশান্ত মিত্ররা বলেন, “রাত যত বাড়ছে, আমাদের উৎকন্ঠাও ততই বাড়ছে। জঙ্গল থেকে হাতিদের ডাক কানে আসছে। বন দফতরে ফোন করে হুলা পার্টি পাঠাতে বলছি সন্ধ্যা থেকেই। কেউ এখনও এসে পৌঁছয়নি।” গ্রামবাসীদের এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ বড়জোড়া রেঞ্জের আধিকারিক মোহন শীট, জিনি এ দিনই খাড়াড়ি গ্রামে বাচ্চা হাতির উপরে গ্রামবাসীদের জ্বলন্ত হুলা ছোড়ার প্রতিবাদ করে মার খেয়েছেন। মোহনবাবু বলেন, “প্রায় ৬৫ জনের হুলাপার্টি ওই জঙ্গলে রয়েছে। তারা হাতিগুলির গতিবিধির উপর সব সময় নজর রাখছে।” |