অসুস্থ মাকে আগলে রেখেছিল সে। কেউ কাছে এলে একটু তেড়ে গিয়েই ফিরে যাচ্ছিল মায়ের কাছে।
আর সেই বাচ্চাকে তাড়াতে গিয়ে এক গ্রামবাসী জ্বলন্ত হুলা ছুড়তেই বাধল বিপত্তি! বছর চারেক বয়স হলে কী হবে এখনই সে পাঁচ ফুটের বেশি লম্বা। চোখের পাশে হুলার আঘাত খেয়ে তাণ্ডব শুরু করল সে। চিৎকার করতে করতে বনকর্তা ও গ্রামবাসীদের দিকে তেড়ে গেল। পায়ের চাপে দুমড়ে দিল সারসার সাইকেল। গ্রামে ঢুকে ভাঙল ঘরবাড়ি, শুঁড়ে তুলে আছড়ে ফেলল দুই গ্রামবাসীকে (তাঁরা অবশ্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন)। পালাতে গিয়ে জখম হলেন অনেকে।
সোমবার দিনভর এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের খাড়ারি গ্রাম। বাচ্চা হাতিটিকে আঘাত করার প্রতিবাদ করে কিছু গ্রামবাসীর হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বন দফতরের বড়জোড়ার রেঞ্জার মোহন শীট। এর পরে কার্যত লুকোচুরি খেলে বাচ্চা হাতিটি নাজেহাল করে দেয় বনকর্মীদের। কয়েক ঘণ্টা পরে বন দফতরের প্রশিক্ষিত হুলা পার্টি দিয়ে বাচ্চা হাতিটিকে খাড়ারির জঙ্গলে ঘিরে রেখে মা হাতিটির চিকিসা শুরু হয়। যদিও ৩০ বোতল স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, ভিটামিন ওষুধ দিয়ে দিনভর হাতিটির চিকিসা করার পরেও তার স্বাস্থ্যের উন্নতি নিয়ে আশার খবর শোনাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। |
চিকিৎসা চলছে মা হাতির।—নিজস্ব চিত্র। |
হাতিটির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বড়জোড়ার পশু চিকিৎসক সঞ্জয় শীট জানান, অতিরিক্ত মাটি খেয়ে ফেলেছে হাতিটি। সেই মাটি পেটের মধ্যে জমাট বেঁধে যাওয়ায় খাদ্য চলাচল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার জেরেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে বছর তিরিশেকের ওই হাতি। সঞ্জয়বাবুর কথায়, “চিকিৎসায় একটু সতেজ হয়ে বারবার হাতিটি ওঠার চেষ্টা করেও পারছে না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” অন্ধকার নামায় চিকিৎসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় বন দফতর। সঞ্জয়বাবু বলেন, “হাতিটির সঙ্কট এখনও কাটেনি। রাত পর্যন্ত সে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে অন্য হাতিরা এসে একে তুলে নিয়ে গেলে ভাল।” প্রয়োজনে কলকাতা থেকে পশু চিকিৎসক আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। ১৩০টি দলমার হাতি একাধিক দলে ভাগ হয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বড়জোড়ার বিভিন্ন জঙ্গলে রয়েছে। বড় দলটি খাড়ারি গ্রাম সংলগ্ন সাহারজোড়া জঙ্গলে রয়েছে। ওই দলেরই হাতির হানায় শনিবার বড়জোড়ার মুক্তাতোড় গ্রামে প্রাণ হারায় একটি শিশু। অসুস্থ হাতিটিও ওই দলেরই। |