সম্পাদকীয় ২...
উন্নয়ন ছাঁটাই
জানা ছিল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম রাজকোষ ঘাটতির হার তাঁহার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় বাঁধিয়া রাখিতে সফল হইবেন এবং তাহা লইয়া আত্মতৃপ্তির হাসি হাসিয়াছেন। ২০১৪-১৫’র অন্তর্বর্তী বাজেট ভাষণে তিনি জানাইয়াছেন, ২০১৩-১৪’র রাজকোষ ঘাটতি হইবে জিডিপি’র ৪.৬ শতাংশ। তিনি ৪.৮ শতাংশের লক্ষ্য ধার্য করিয়াছিলেন। অর্থাৎ, তাঁহার ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াইয়া গিয়াছে। তাঁহার সরকার তথা দলের যে হাল হইয়াছে, তাহাতে চিদম্বরম সামান্য মানসিক সুখ পাইলে কেহ ঈর্ষা করিবেন না। কিন্তু ‘ভাল করিয়া সংসার চালাইয়াছি’ বলিয়া অর্থমন্ত্রী যদি গর্ব করিতে চাহেন, সে অহঙ্কার মানিয়া লওয়া কঠিন। ঘাটতি তিনি, অন্তত কাগজেকলমে, নিয়ন্ত্রণে রাখিয়াছেন বটে, কিন্তু যে ভাবে সেই কাজটি সম্পাদন করিয়াছেন তাহা কৃতিত্বের পরিচায়ক নয়। এক দিকে, টুজি স্পেকট্রামের লাইসেন্স বিক্রয় করিয়া কোষাগারে মোটা টাকা আসিয়াছে, যাহাতে অর্থমন্ত্রীর কোনও কৃতিত্ব নাই। অন্য দিকে, যোজনা বরাদ্দ ছাঁটাই করিয়া তিনি ব্যয়সংকোচ করিয়াছেন, যাহা উন্নয়নের গতি কমাইয়া দিতে বাধ্য।
তাঁহার প্রতিযুক্তি: অর্থনীতির অগ্রগতি তাহার প্রত্যাশিত হারের তুলনায় কম হইয়াছে বলিয়া ব্যয়ের প্রয়োজনও কমিয়াছে, যোজনা বরাদ্দ হ্রাস তাহারই ‘স্বাভাবিক’ পরিণতি। ইহা যুক্তি নয়, কুযুক্তি। যোজনা ব্যয় নূতন সম্পদ সৃষ্টির জন্য অথবা যে সম্পদ আছে তাহার সদ্ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হইয়া থাকে। সেই বরাদ্দ ছাঁটাই করিলে সম্পদ-ভিত্তির প্রত্যাশিত সমৃদ্ধি ঘটে না, ফলে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ব্যাহত হয়। অর্থাৎ, ভারতীয় অর্থনীতি মন্দাক্রান্ত বলিয়াই যোজনা ব্যয় ছাঁটাই করা আরও অনুচিত, কারণ তাহাতে মন্দার আশঙ্কা আরও বাড়িবে। চিদম্বরম, অন্তত কাগজেকলমে, ঘাটতি ধরিয়া রাখিয়াছেন বটে, কিন্তু অর্থনীতিকে তাহার মূল্য গনিয়া দিতে হইবে। তিনি আগামী বছরে আয়বৃদ্ধির গতি বাড়িবার আশা প্রকাশ করিয়াছেন। সেই আশা যদি চরিতার্থ হয়, তাহার পিছনে এই বাজেটের কোনও অবদান থাকিবে না।
প্রাক্-নির্বাচনী হিসাবপত্রটিতে নূতন নীতি ঘোষণার কোনও প্রশ্ন ছিল না, তাহা হয়ও নাই। শুল্কের হারে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়াছে, প্রধানত মোটরগাড়ির বিক্রয় ও উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়াই যাহার লক্ষ্য। মোবাইল টেলিফোনের জন্যও অনুরূপ উৎসাহ বরাদ্দ হইয়াছে। ভারতীয় অর্থনীতিতে শুল্কের হার এখনও প্রতিযোগী নানা দেশের তুলনায় চড়া। শুল্ক কাঠামোয় নানা জটিলতাও দুর্মর। পণ্য ও পরিষেবার কর নামক সরল শুল্ক কাঠামো প্রবর্তনের দিনক্ষণ ক্রমশই পিছাইয়াছে, চিদম্বরম এ বিষয়ে আরও এক বার তাঁহার ‘হতাশা’ জানাইয়াছেন। সেই হতাশা লইয়া জনসাধারণ কী করিবেন, তাঁহারাই জানেন। তবে একটি কারণে অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ না জানাইলে অন্যায় হইবে। তাঁহার অন্তর্বর্তী বাজেটকে ‘নির্বাচনী’ বাজেট বলিবার মতো বিশেষ কিছুই তিনি এই হিসাবের খাতায় রাখেন নাই। অনুমান করা যায়, তেমন চাপ তাঁহার উপর বিলক্ষণ ছিল। বিশেষত, কংগ্রেসের সঞ্জয় ঝা কর্তৃক সম্প্রতি উল্লেখিত ‘জনৈক তরুণ’ যদি জনকল্যাণ ব্যয় বরাদ্দ বিশেষ ভাবে বাড়াইবার আর্জি পেশ করিয়া থাকেন, বিস্ময়ের কিছু নাই। কিন্তু চিদম্বরম সেই পথে হাঁটেন নাই। তবে কি তাঁহার দলের নির্বাচনী প্রত্যাশা এমনই অতলে পৌঁছাইয়াছে যে ভোটের বাজেট করিবার প্রয়োজনও আর নাই?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.