সম্পাদকীয় ১...
শিল্পমন্ত্রীর পালা
র্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তৃপ্তির হাসি হাসিতেই পারেন। তাঁহার প্রধান দায়িত্ব ছিল রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি করা। তিনি সেই কাজে সফল। আগামী বৎসরের জন্য তিনি বেশ চড়া লক্ষ্যমাত্রা স্থির করিয়াছেন। অনুমান করা চলে, বর্তমান সাফল্য তাঁহাকে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে প্রত্যয়ী করিয়াছে। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য তিনি কর কাঠামো এবং আদায় ব্যবস্থার সরলীকরণের পথটি বাছিয়া লইয়াছেন। কাজটি দীর্ঘ দিন বকেয়া ছিল। বকেয়া কর আদায়ের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা জরিমানার ফাঁস। অর্থমন্ত্রী সেই জরিমানার পরিমাণ কমাইয়াছেন। যুক্তমূল্য করের ক্ষেত্রে ব্যবসার ন্যূনতম পরিমাণের বাধাটিও তুলিয়া লইয়াছেন। সম্পত্তির ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি কমাইয়াছেন। প্রতিটি সিদ্ধান্তই করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে সহায়ক হইবে বলিয়া অনুমান করা চলে। অন্য দিকে, কর প্রদানের জন্য নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়াটিকে অনলাইন করিয়া দেওয়া বা সমস্ত কর একই জানালায় দেওয়ার সুবিধা করিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলিও আগামী বৎসর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়াইবে। গত বৎসরের এবং বর্তমান, উভয় বাজেটকে একত্র দেখিলে অমিত মিত্রের চিন্তাপদ্ধতির যে গতিরেখাটি স্পষ্ট হয়, তাহা পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় অর্থসংকটক্লিষ্ট রাজ্যের পক্ষে অতি জরুরি। কাজেই, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সফল না বলিবার কোনও কারণ নাই।
কিন্তু, গত বৎসর অবধি রাজ্যের মন্ত্রিসভায় এক জন অমিত মিত্র ছিলেন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এই বৎসর আরও এক জন উপস্থিত। তিনি শিল্পমন্ত্রী। দ্বিতীয় জনের নিকট রাজ্যের যে প্রত্যাশা ছিল, তিনি তাহা পূরণ করিতে পারিলেন না। অন্তত, তাঁহার বাজেট বক্তৃতায়। কর সরলীকরণের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব বাড়াইতে পারেন বটে, কিন্তু তাহা দীর্ঘমেয়াদি পথ হইতে পারে না। রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করিতে চাহিলে শিল্পই একমাত্র পথ। সত্য, রাজ্য বাজেটে বৃহৎ শিল্পের জন্য কোনও সুবিধা ঘোষণা করা সম্ভব নহে। কিন্তু শিল্পের জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তাহার একটি রূপরেখা এই বাজেটে প্রত্যাশিত ছিল। সড়ক প্রয়োজন ছিল, বিদ্যুদয়নের পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল। রাজ্য সড়কের যে সামান্য সম্প্রসারণের কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাতে শিল্পায়নের রথ চলিবে না। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কথা বলিয়াছেন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যে বৃহৎ নির্মাণ শিল্প প্রয়োজন। তাহার জন্য জমি চাই, রাস্তা চাই, বিদ্যুৎ চাই। রাজ্যের বাজেটে সেই পথনির্দেশ থাকিলে শিল্পমহল আশ্বস্ত হইত। অর্থমন্ত্রীকেও আর প্রতি বৎসর ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র ট্র্যাজিক কাহিনি শুনাইতে হইত না, শিল্পই পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষ ভরিয়া রাখিত। এই বাজেটের বৃহত্তম খামতি শিল্পায়নের প্রতি প্রকৃত দায়বদ্ধতার অভাব।
অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছেন, এই বাজেট কর্মসংস্থান-মুখী। এই বৎসর, তাঁহার হিসাবে, যত কর্মসংস্থান হইয়াছে, আগামী বৎসর তাহার ২১ শতাংশ বেশি করিবার লক্ষ্য ঘোষণা করিয়াছেন তিনি। কিন্তু সেই কর্মসংস্থান কোন পথে হইবে, অর্থমন্ত্রী তাহার সম্যক উত্তর করিতে পারেন নাই। পর্যটনের প্রসার ঘটাইয়া কর্মসংস্থানের প্রস্তাব সম্পর্কে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অমিতবাবুর পূর্বসূরিও প্রচুর কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখিতেন। সেই স্বপ্ন যে বাস্তবায়িত হয় নাই, শ্রীমিত্র তাহা বিলক্ষণ জানেন। কাজেই, সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। বেকার যুবকদের গাড়ি কিনিবার টাকা জুগাইয়া অথবা পাঁচটি কর্মতীর্থ গড়িয়া এই সমস্যার সমাধান হইবে না। কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প প্রয়োজন। বৃহৎ শিল্প। যুগ বদলাইয়াছে বটে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যাকরণ এখনও অপরিবর্তিত। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করিয়া তাঁহার কর্তব্য পালন করিয়াছেন। এই বার শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের পালা। এই বাজেট বক্তৃতায় অনেক ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেল। আশাবাদী হইতে দোষ কী?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.