ধুঁকতে থাকা গাড়ি শিল্প অবশেষে অক্সিজেন পেল।
সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অন্তর্বর্তী বাজেটে উৎপাদন শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতিক্রিয়া গাড়ি শিল্পের। উৎপাদন শিল্পের অন্যতম স্তম্ভ গাড়ি শিল্প। তাই সার্বিক ভাবে উৎপাদন শিল্পের পক্ষেও এটা সুখবর বলেই মনে করছে শিল্পমহল।
উৎপাদন শুল্ক কমায় গাড়ির দামও কমার কথা। দাম কমলে পাল্লা ভারী হবে চাহিদার। চিদম্বরমের এই ভাবনাকে সঙ্গী করেই গাড়ির দাম কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে মারুতি-সুজুকি, জেনারেল মোটরস, টাটা মোটরস, হুন্ডাই মোটরস, হোন্ডা মোটরস, মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, ডিএসকে হিউসং-সহ বিভিন্ন সংস্থা। তবে কোন গাড়ির দাম কবে থেকে কতটা কমবে, তা এ দিন স্পষ্ট করেনি সংস্থাগুলি। শুধু জানিয়েছে, সেই হিসেব তারা এ দিন থেকেই কষতে শুরু করেছে। |
মন্দার গেরো থেকে বেরোতে শুল্ক হ্রাস-সহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছিল গাড়ি শিল্পের সংগঠন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম)। সম্প্রতি অটো এক্সপোয় কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল জানিয়েছিলেন, এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে চিদম্বরমের কথাও হয়েছে। গাড়ি শিল্পের প্রত্যাশা মিটিয়ে এ দিন চিদম্বরম জানিয়েছেন, ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্কুটার ও বাণিজ্যিক গাড়ির উৎপাদন শুল্ক ১২% থেকে কমে হচ্ছে ৮%। এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্ল)-এর ক্ষেত্রে তা ৩০% থেকে কমে হচ্ছে ২৪%। এগুলি বাদে অন্য বড় ও মাঝারি গাড়ির উৎপাদন শুল্ক যথাক্রমে ২৭% থেকে কমে হচ্ছে ২৪% এবং ২৪% থেকে ২০% । পাশাপাশি চেসিস ও ট্রেলারের উপরেও উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এই সব সিদ্ধান্তে খুশি সিয়ামের প্রেসিডেন্ট বিক্রম কির্লোস্কর। উল্লেখ্য, ২০০৮-এর মন্দার সময়েও একই রকম সুবিধা পেয়েছিল গাড়ি শিল্প।
জাতীয় আয়ের ৬% জোগায় গাড়ি শিল্প। উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারি প্রায় ২২%। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ১৯ লক্ষ কর্মসংস্থানের উৎস এই শিল্প দেশের আর্থিক ভিত্তির অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি সঙ্কটের মুখে তারা। বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি কমছিলই। সমস্যা আরও বাড়ে গত ১১ বছরের মধ্যে গত বছরই প্রথম যাত্রী গাড়ি বিক্রিও কমে যাওয়ায়। যা ২০০৮-এ মন্দার সময়েও ঘটেনি। এ সবের জেরে এই শিল্পে কর্মসংস্থান সঙ্কোচনেরও আশঙ্কা তৈরি হয়।
এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের খবর শিল্পের কাছে তাজা বাতাসের মতো বলে মনে করছেন মারুতি-সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব, জেনারেল মোটরস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট পি বলেন্দ্রন, মহীন্দ্রার এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট পবন গোয়েন্কা, হুন্ডাইয়ের এমডি বি এস সিও, সকলেই। এর ফলে গাড়ি কিছুটা হলেও সহজলভ্য হবে। ফলে বিক্রি বাড়বে। যে-ছবিটা বছরখানেক ধরেই শো-রুম থেকে কার্যত উধাও।
কোন গাড়ির দাম কতটা কমছে? সংস্থাগুলি স্পষ্ট করে এ দিন কিছু জানায়নি। শুধুমাত্র মার্সিডিজ বেঞ্জ জানিয়েছে, তাদের সি, ই এবং জিএল ক্লাসের দাম (দিল্লিতে)। তবে গাড়ি শিল্পের হিসেব বলছে, এক লক্ষ টাকায় গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দাম কমতে পারে। তবে উৎপাদন শুল্ক ৪% কমলে সেই হারেই দাম কমবে এমন নয়। বরং ক্রেতার কাছে তা শুল্ক হ্রাসের চেয়ে সামান্য কমই হবে। তবুও গাড়ি শিল্প আশাবাদী, যে-সব ইচ্ছুক ক্রেতা গাড়ি কেনা ও তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচের বোঝার কথা ভেবে পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছিলেন, তাঁদের একটা অংশ এই সুযোগ নেবেন।
পাশাপাশি যাঁরা নতুনের বদলে কম দামে পুরনো গাড়ি কেনার পথে হাঁটার কথা ভাবেন, নতুন গাড়ির দাম কমিয়ে তাঁদেরও একাংশকে আকৃষ্ট করা যাবে বলেই আশা করছে গাড়ি সংস্থাগুলি।
তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গাড়ি সংস্থার কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন আরও একটি বিষয়। পবন গোয়েন্কা কিংবা ডিএসকে হিউসঙের চেয়ারম্যান এস কুলকার্নির বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের পরেও নতুন আর্থিক বছরে যেন বজায় থাকে শুল্ক হ্রাসের এই সিদ্ধান্ত। বলেন্দ্রনও বলেন, “কয়েক মাসের জন্য এই শুল্ক হ্রাস করলে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না। দীর্ঘমেয়াদে এই সুবিধা দিলে তবেই গাড়ির বিক্রি বাড়বে।” না-হলে ফের গাড়ি শিল্পের চাকা গাড্ডায় পড়বে বলেই আশঙ্কা তাঁদের। |