রাজ্যের ছোট ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিকে সহায়তার হাত বাড়াতে এবারকার বাজেটে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ওই ব্যবস্থাগুলি চালু হলে সহজে ঋণ পাওায়ার পাশাপাশি ভ্যাট এবং অন্যান্য কর সংক্রান্ত একাধিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা।
এই বারের বাজেটে অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ঋণ পান, তার ব্যবস্থা চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন অমিতবাবু। এর জন্য ‘মাইক্রো বিজনেস ক্রেডিট কার্ড’ চালু করা হচ্ছে বলেও এ দিন জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তার জন্য অনেকটা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ধাঁচে রাজ্যে ওই কার্ড চালু করতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যেই হাত মিলিয়েছে রাজ্য সরকার।
মাইক্রো বিজনেস ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা কী? ওই কার্ডের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারবেন অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কার্ডটি মঞ্জুর করবে স্টেট ব্যাঙ্ক এফ ইন্ডিয়া। এমন কী মোবাইল বা টিভি সারাই, স্যালুন, ছোট ছোট দোকান ইত্যাদি ব্যবসা যাঁরা চালান, তাঁরাও ওই কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিতে পারবেন।
যাঁদের ট্রেড লাইসেন্স আছে, তাঁরা তো পাবেনই। ট্রেড লাইসেন্স নেই এমন যোগ্য প্রার্থিকেও ওই কার্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার সুনীল শ্রীবাস্তব। ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে যে বিষয়গুলি স্টেট ব্যাঙ্ক যাচাই করে দেখবে, তার মধ্যে রয়েছে, ব্যবসার বাৎসরিক আয়, ঋণের প্রয়োজন এবং ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা।
তবে এ বার থেকে ওই ঋণ পেতে হলে কোনও কিছু বন্ধক বা ‘কোল্যাটারাল সিকিউরিটি’ রাখার প্রয়োজন হবে না।
এ ছাড়া এই বছরের বাজেটে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং তা নবীকরণ করার বিষয়টিও সরল করেছেন। পুরনো নিয়ম অনুসারে, ব্যবসার মোট আয় বছরে কম পক্ষে ৫০ হাজার টাকা হলে তবেই ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যেত। এবার আয়ের ওই সীমা পুরোটাই তুলে দিয়েছেন অমিতবাবু।
এর পাশাপাশি ভ্যাট রেজিট্রেশন বা নবীকরণ করার পদ্ধতিও অনেক সরল করা হয়েছে। এ বার থেকে ওই দুটি জিনিস করাতে আর বাণিজ্য কর দফতরে ছুটোছুটি করতে হবে না ব্যবসায়ীদের। রেজিস্ট্রেশন এবং নবীকরণ, দুটিই এ বার বাণিজ্য কর দফতরের ওয়োবসাইটের মাধ্যমেই তাঁরা করতে পারবেন।
বিভিন্ন কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থা চালু করেও এবার ব্যবসায়ীদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন অমিতবাবু। বাজেট বক্তৃতায় তিনি জানিয়েছেন, ভ্যাট, প্রবেশ কর এবং বৃত্তিকর, এই তিনটি জমা দেওয়ার ব্যাপারে এক-জানালা ব্যবস্থা চালু করার হবে। আগে ওই তিনটি কর পৃথক পৃথক দফতরে জমা দিতে হত।
ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ইনস্পেক্টর রাজের বিরুদ্ধে। এবার বাজেটে অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু ঘোষণা করেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে ইনস্পেক্টর কোনও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ইনস্পেকশন করতে যেতে পারবেন না।
ব্যবসায়ীদের জন্য অমিতবাবুর ওই সব পদক্ষেপে খুশি রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল। যদিও আরও কিছু দাবি কেন মানা হল না, তা নিয়ে কিছু কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রাজ্যের ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে যে সব দাবিগুলি করে আসছিলাম, সেগুলি এ বার পূরণ করেছেন অর্থমন্ত্রী।” একই ভাবে ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েশনস অব কটেজ অ্যান্ড স্মল ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এইচ কে গুহ এবং ফসমির সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য মনে করেন, “এ বার বাজেটে ব্যবসা এবং ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে যে সব পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাতে যুবকদের মধ্যে ব্যবসা শুরু করার উৎসাহ বাড়বে।” কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফিরোজ আলি বলেন, “ইনপুট ট্যাক্স রিফান্ডের ব্যাপারে নতুন যে ব্যবস্থা অমিতবাবু চালু করেছেন, তাতে ব্যবসায়ীরা বিশেষ ভাবে উপকৃত হবেন।”
তবে তাঁদের অধিকাংশ দাবিই অর্থমন্ত্রী মানেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহেশ সিংহানিয়া। তিনি বলেন, “ট্রেড পলিসি তৈরি করার দাবি আমরা করেছিলাম। এতে রাজ্যের ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে উপকৃত হতেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সে ব্যাপারে বাজেটে কিছুই উল্লেখ করেননি।” |