ডক নদীর পাশে কামারগছ গ্রাম। কৃষি কাজ ও মাছ ধরাই বাসিন্দাদের অন্যতম আয়ের উৎস। বিকেল হলেই নদী পাড়ের গ্রামের মাঠে ভিড় করে চম্পা, মালতি, অজিতারা। কেউ নবম শ্রেণি, কেউ বা কলেজের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। কারও জার্সি নেই, আবার কারও জুতো ছেঁড়া। উৎসাহে খামতি নেই। ফুটবল নিয়ে মাঠ জুড়ে দৌড়য় ওরা ত্রিশ জন।
ইসলামপুর শহর থেকে খানিকটা দূরের শুধু কামারগছ গ্রামই নয়, ওই এসাকার সাতটি গ্রামের ১২ থেকে ২১ সব বয়সী মেয়েদের খেলতে দেখা যায় কামারগছের মাঠে। বাড়ির সদস্যদের উৎসাহের মতো গ্রামের বাসিন্দারাও তাঁদের পাশে থাকতে আগ্রহী। বাদ সেধেছে অস্বচ্ছলতা। তাঁদের সকলের একই সঙ্গে অনুশীলন করানোর মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যায় ফুটবলও নেই। |
কামারগছের মাঠে প্রতিদিনের অনুশীলন। ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ পাল। |
এলাকার মেয়েদের খেলার মাঠে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন পেশায় জীবন বিমা সংস্থার এজেন্ট তথা কামারগছ নবজাগরণ যুব উন্নয়ন সমিতির সভাপতি মানিকলাল সিংহ। নিজে উদ্যোগী হয়ে চাঁদা তুলে মেয়েদের খেলার কিছু সরঞ্জাম কিনেছিলেন তিনি। মেয়েরা যাতে ঠিক ভাবে ফুটবল খেলা শিখতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন এক জন কোচেরও। মানিক বলেন, “খেলার প্রতি যুব সম্প্রদায়ের আগ্রহ বাড়াতেই উদ্যোগী হয়েছিলাম। এলাকার সমর্থন রয়েছে বলেই এখনও চালিয়ে যেতে পারছি। সামান্য সরকারি সাহায্য মিলেছে। মেয়েদের খেলা ধরে রাখতে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন।”
সম্প্রতি শিলিগুড়ি শহর ও সংলগ্ন নকশালবাড়িতে খেলতেও গিয়েছিল মেয়েদের দলটি। ইসলামপুরের মহকুমা শাসক নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, “প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা যে ফুটবল খেলছে তা সত্যিই একটি ভাল প্রয়াস। মেয়েরা যদি সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করে তবে তা খতিয়ে দেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রতিদিনই ভোর ৬টায় মাঠে দেখা যায় ইসলামপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী চম্পা বিশ্বাস, নবম শ্রেণির ছাত্রী মালতি বাস্কে, চন্দ্রিকা সিংহ, অজিতা সিংহ-সহ অন্যদের। কেউ চোপড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী, কেউ গ্রামের পাশের স্কুলে পড়াশোনা করে। চম্পা বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে বলেন, “খেলার মাঠে আনন্দ রয়েছে। তা উপলব্ধি করেছি বলে প্রতিদিন সকালে বিকেলে ছুটে আসি অনুশীলন করতে। যত দিন সম্ভব হবে খেলতে চাই।” |