এখনও অধরা ১৭ আবাসিক
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
ম্যায় হুঁ ডন—চিৎকার করে বলত সে। হুঙ্কার শুনে সঙ্গে থাকা অন্য কিশোররা ভয়ে সিঁটিয়ে গেলেও হোম কর্তাদের কেউ এত দিন তেমন গা করেনি। হল্লা শুনে ‘ওঁরা এমনটা করে’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। এ ভাবে কোনও এক সময়ে ‘লিটল ডন’ হয়ে ওঠা ওই বাংলাদেশি কিশোর বিচারাধীন বন্দি, শুক্রবার রাতে ২২ জনকে নিয়ে পালিয়ে সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীন জলপাইগুড়ির কোরক- কর্তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
যে ২২ জন কিশোর ওই বন্দির নেতৃত্বে তাণ্ডব চালিয়ে পালিয়ে যায় তাঁদের মধ্যে ৩ জনকে শনিবার ভোরে পুলিশ ধরে। রবিবার সকালে আরও দু’জন পলাতক কিশোর স্বেচ্ছায় ফিরে আসে। এখনও ১৭ জন পলাতক। তাঁদের মধ্যে ৮ বাংলাদেশি রয়েছে। ফিরে আসা কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে হোম কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কর্তারা গত এক বছর থেকে কোরকে বন্দি বাংলাদেশি লিটল ডনের কীর্তি শুনে অবাক। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ওই দুই কিশোর জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগে হোম থেকে পালানোর ছক তৈরি করে লিটিল ডন। কেমন করে গেটের তালা ভেঙে নিরস্ত্র কর্মীদের ঘায়েল করতে হবে সেটাও অন্যদের সে ধমক দিয়ে শিখিয়ে নেয়। যে কিশোররা পালানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে, সেই সময়ে তাঁদের কপালে জুটেছে মারধর। তাই কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। মারের ভয়েই অচেনা পথে নিরাপদে পালানোর জন্য সাহায্য করতে রাজি হয়ে যায় কয়েকজন কিশোর বন্দি।
কেমন ছিল পালানোর ছক? দুই কিশোর জানায়, বাংলাদেশি কিশোর বন্দিরা লিটল ডনের নেতৃত্বে অন্যদের নিয়ে হোম থেকে পালিয়ে তাঁদের মতো স্থানীয় পথঘাট চেনা কয়েক জনকে সামনে রেখে নদী বাঁধ ধরে তিস্তা পাড়ে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে জানতে চায় বাংলাদেশ কোন পথে, ও কত দূরে? স্থানীয় কিশোররা জানায়, নদীর ওপারে ময়নাগুড়ি। তার পরে চ্যাংরাবান্ধা হয়ে বাংলাদেশ। এটা জেনে পরে লিটিল ডন সহ বাংলাদেশি কিশোররা নদী পার হওয়ার জন্য দৌড়োতে শুরু করে। ওই সুযোগে দুই কিশোর অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে উল্টো রাস্তা ধরে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ওঠে। সেখান থেকে ভোরে ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামে। শিলিগুড়ি মহানন্দা পাড়ায় এক আত্মীয়র বাড়িতে রাত কাটিয়ে রবিবার সকালে হোমে ফিরে আসে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “পলাতক কিশোরদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” এ দিন জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। বন্দিদের কাউন্সেলিং প্রয়োজন।” হোম পরিচালন কমিটি, শিশু কল্যান সমিতি সদস্য সুদীপ চক্রবর্তী জানান, হোমে বিচারাধীন বন্দি ছাড়াও ৪০ জন অনাথ শিশু থাকে। তাঁদের অনেকে স্কুলে পড়ে। বন্দিদের আচরণ অনাথ শিশুদের প্রভাবিত করছে। তাই তাঁরা কিশোর বন্দিদের পৃথক রাখা তাঁদের সংশোধনে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থার জন্য রাজ্যের মুখ্য সচিবকে আর্জি জানিয়েছেন। |