করিমপুরের ছয় যুবক বিকল্প চাষে দিশা দেখাচ্ছেন
প্রচলিত চাষের চেনা ছক থেকে বেরিয়ে বিকল্প চাষে আশার আলো দেখাচ্ছেন ওঁরা। নদিয়ার করিমপুর এলাকার হার না মানা ওই ছয় যুবককে দেখে এখন উৎসাহিত হচ্ছেন পড়শি গ্রামের লোকজনও।
করিমপুরের গোয়াশ গ্রামে প্রায় ৩৮ বিঘা জমিতে ফুল, কুলের পাশাপাশি চলছে স্ট্রবেরির চাষ। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ‘কৃষক সম্মান’ পুরস্কারও পেয়েছেন তাঁরা। খেত লাগোয়া অফিস ঘর, গ্রীন হাউসের পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে তাঁরা একটা ছোট গাড়িও কিনে ফেলেছেন। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, গাঁদা, কুল ও স্ট্রবেরির চাষ শুরু করার সময় ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই, “ধান, পাট ছেড়ে গোলাপ, গাঁদা?” কয়েক বছর কাটতে না কাটতে এখন তাঁরাই বলছেন, “মাঠভর্তি এমন ফুল, ফল দেখতে পাব, সত্যি কথা বলতে, আগে কখনও ভাবিনি। ওঁদের এলেম আছে বটে!”
করিমপুর এলাকার ওই ছয় যুবক সকলেই ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। সুজিত সাহা, সৌমেন বিশ্বাস ও প্রতিম মণ্ডল কলেজকর্মী। বিমান বিশ্বাসের মুদির দোকান রয়েছে। সিদ্ধান্ত পাল পেশায় স্বর্ণশিল্পী। আর আশুতোষ বিশ্বাস বিমাকর্মী ছিলেন। এখন অবশ্য তিনি মন দিয়ে চাষআবাদ করছেন। তাঁরা বলছেন, “ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আমাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। আর সেই কারণেই আমরা নিজেদের অন্য কাজকর্ম করেও একসঙ্গে এই চাষআবাদও করছি।”
আশুতোষবাবুর কথায়, “অনেকদিন থেকেই একটা নতুন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। সেই কারণে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা পড়তাম। এভাবেই বিকল্প চাষ হিসাবে স্ট্রবেরি চাষের কথা জানতে পারি। নদিয়ার এক কৃষি আধিকারিক, হরিদাস মণ্ডলের ফোন নম্বরও পেয়ে যাই। তারপর ওই আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এই চাষ শুরু করি।” বছর দেড়েক আগে ওই যুবকরা স্ট্রবেরি চাষ শুরু করলেও এখন বিঘের পর বিঘে জমিতে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধার পাশাপাশি রয়েছে কুলও। সিদ্ধান্তবাবু বলেন, “আশুকে সামনে রেখেই আমরা পথচলা শুরু করি। প্রথমদিকে চাপে থাকলেও এখন এই চাষ থেকে ভাল আয়ও হচ্ছে।”
নদিয়ার ওই কৃষি আধিকারিক হরিদাস মণ্ডল বলছেন, “আমি নিজের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গোটা কয়েক স্ট্রবেরির চারা আনিয়েছিলাম। পরে করিমপুরের ওই যুবকেরা এই চাষে উৎসাহ দেখালে আমি স্ট্রবেরি চাষের ব্যাপারে আরও খোঁজখবর দিয়েছিলাম। ওঁরা তো এখন স্ট্রবেরি ছাড়াও কুল ও ফলের ভালই চাষ করছেন।”
কিন্তু বিকল্প এই চাষের ঝুঁকি কি চাষিরা নেবেন? হরিদাসবাবুর কথায়, “বিকল্প চাষের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে খরচ একটু বেশি হয় ঠিকই। কিন্তু পরে সেই খরচ অনেকটাই কমে যায়। তাই নতুন কোনও চাষ করতে গেলে লোকসানের ভয়ে অনেকেই প্রচলিত চাষের বাইরে বেরোতে চান না। কিন্তু যাঁরা এই ঝুঁকিটা নিতে পারেন, তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাভবান হন। কারণ বিকল্প চাষে লাভের পরিমাণ চেনা চাষের থেকে সব সময় বেশি।” করিমপুরের ওই যুবকদের দেখে সীমান্তের শিকারপুরের তিন যুবক দেবব্রত সরকার, হেমন্ত মণ্ডল ও সুজিত মণ্ডলরাও দেড় বিঘা জমিতে উন্নত প্রজাতির কুল চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন। দেবব্রতবাবু বলেন, “ওঁদের পরামর্শে কুল চাষ করে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছি।’’
নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) পার্থ প্রামাণিক বলেন, ‘‘চাষিরা চাইলে আমরা প্রশিক্ষণ ছাড়াও সব রকমের সাহায্য করতে প্রস্তত। শীঘ্র ওই যুবকদের সঙ্গে কথাও বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.