সাজা কম, ছোটদের দুষ্কর্মে নামাচ্ছে দাগিরা
রা পড়লে কড়া শাস্তির ভয় নেই। কিন্তু কাজ হাসিল করলেই মিলবে মোটা টাকা। এই লোভের ফাঁদে ফেলে এক ঝাঁক কিশোরকে নানা দুষ্কর্মে নামিয়েছে কিছু দাগি অপরাধী। সেই দলে যেমন যোগ দিয়েছে স্কুলছুট কিশোর, রয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও। বর্ধমানের রায়নায় ছিনতাই করতে গিয়ে এক চালকল মালিককে গুলির ঘটনায় দুই কিশোরকে ধরার পরে এই তথ্য পেয়ে তাজ্জব পুলিশও।
পুলিশ জানায়, রায়না-খণ্ডঘোষে এমন অন্তত দশ জন কিশোরের খোঁজ মিলেছে, যারা গত ছ’মাস ধরে নানা অপরাধ ঘটিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তাদের পিছনে রয়েছে নানা পুরনো মামলায় অভিযুক্ত কিছু লোক। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই সব কিশোরকে টাকার লোভ দেখিয়ে এই কাজে নামাচ্ছে তারা, ধৃতদের জেরা করে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
গত বৃহস্পতিবার খণ্ডঘোষের এক চালকল মালিক শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান থেকে টাকা নিয়ে ফেরার সময়ে রায়নার সগড়াই মোড়ের কাছে পথ আটকে তাঁর টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দু’জন। শুভজিৎবাবু এক জনকে জাপটে ধরলে সে ওয়ান শটার বের করে গুলি চালায়। শুভজিৎবাবু পড়ে গেলে তারা পালায়। তিনি পুলিশকে জানান, ধস্তাধস্তির মধ্যে একটি গুলি ছিনতাইকারীর নিজের পায়েও লেগেছে। দু’জনের চেহারার বর্ণনাও পুলিশকে দেন তিনি।
তদন্ত করতে নেমে পুলিশ শনিবার দুপুরে খণ্ডঘোষে বছর ষোলোর এক কিশোরকে আটক করে। বর্ধমান শহরের একটি স্কুলের এই ছাত্র এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার পায়ে ছিল টাটকা ক্ষত। চিকিৎসক ডেকে পরীক্ষা করিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সেই ক্ষত গুলিরই।
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ছেলেটি স্বীকার করে, সে দিন চালকল মালিককে সে-ই গুলি করেছিল। এলাকার এক দুষ্কৃতীর সঙ্গে মোটরবাইকে সগড়াই মোড়ে গিয়েছিল সে। শুভজিৎবাবুকে আটকানোর জন্য আগে থেকে সেখানে ছিল অন্য এক কিশোর। পঞ্চম শ্রেণির পরে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া সেই ছেলেটিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
বর্ধমানের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ জানান, মাস ছয়েকের মধ্যে নানা অপরাধে চার জন কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে রায়নার মূলকাঠি গ্রামে একটি জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে দেখা যায় সেটি চালায় এক কিশোর, যার বাবা নানা অপরাধে অভিযুক্ত। ধরা পড়ার পরে এই সব কিশোরেরা এখন বিভিন্ন সরকারি হোমে রয়েছে। কিন্তু তাদের যে রীতিমতো পরিকল্পনা করে কাজে নামিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, চালকল মালিককে গুলির ঘটনার আগে বুঝতেই পারেনি পুলিশ।
এসডিপিও বলেন, “ওই ঘটনায় ধৃত ছেলে দু’টিকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। তারা জানিয়েছে, এলাকার কয়েক জন দাগি দুষ্কৃতী তাদের মতো অন্তত দশ জনকে চুরি, ছিনতাইয়ে নামিয়েছে। তাদের তালিকা তৈরি করেছি আমরা। ওই দুষ্কৃতীদেরও পুলিশ খুঁজছে।” পুলিশ জেনেছে, এই ছেলেদের দিয়ে মূলত মোটরবাইক চুরি, টাকা ছিনতাইয়ের কাজ করাত দুষ্কৃতীরা। বর্ধমান থেকে টাকা তুলে কোন চালকল মালিক কখন এলাকায় ফিরছে, সেই তথ্য সরবরাহও করত কিশোরেরা।
কেন নাবালকদের দিয়ে চুরি-ছিনতাই করাচ্ছে দুষ্কৃতীরা?
এসডিপিও-র দাবি, “১৮ বছরের কম বয়সের কোনও অপরাধীকে জেলে পাঠানো যায় না। বরং, তারা যাতে আর দুষ্কর্মের পথে না যায়, সে জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো হয়। তারই সুযোগ নিচ্ছে দাগি দুষ্কৃতীরা।” পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, ধরা পড়লে বড় শাস্তি হবে না, কিন্তু না পড়লে হাতে আসবে টাকাএই অভয় ও লোভেই এমন কাজ করেছে তারা।
আর কোনও কিশোর যাতে চুরি-ছিনতাইয়ে না জড়ায়, সে জন্য রায়না ও খণ্ডঘোষের গ্রামে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.