মেয়ে পড়ুয়াদের ভাগ্যে শিকে কি ছিঁড়বে এ বছর?
প্রশ্নটা রীতিমতো টেনশনে রেখেছে আবদুল করিম চৌধুরীকে। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রীর বক্তব্য, “বেশি তো চাইনি, কেবল ১৫ কোটি টাকায় শুরু করতে চাই গোটা পঞ্চাশেক লাইব্রেরি। কেবল মেয়েদের জন্য। পুরোটা যদি এক সঙ্গে না-ও দেয়, যা দেবে তাই দিয়েই আমরা কাজ শুরু করে দেব।” ২০১২ সালের মাঝামাঝি প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “যদি পারেন তো করুন।” সেই সবুজ সঙ্কেত পেয়েই প্রস্তাব জমা দেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী। কিন্তু অর্থমন্ত্রকের লাল সিগন্যালে গত বাজেটে আটকে যায় প্রকল্প। তারপর অবশ্য গ্রন্থাগার দফতর থেকে অর্থ দফতরে প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ফাইলের নিচেই চাপা পড়ে রয়েছে সেই প্রকল্প।
রাজ্য অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “গ্রন্থাগার দফতরের পরিকল্পনা জমা পড়েছে।” অর্থ দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তফসিলি জাতি, জনজাতি, এবং সংখ্যালঘুদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে মহিলা গ্রন্থাগারের টাকা ধার্য করা যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ দিতে হবে।
কিন্তু মেয়েদের জন্য আলাদা লাইব্রেরির দরকার কী?
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে তাঁর কাছে প্রথম মহিলা লাইব্রেরির প্রস্তাব এসেছিল, জানিয়েছেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে মেয়েদের সাক্ষরতা ছেলেদের তুলনায় কম। গ্রন্থাগারে নিয়মিত যেতে পারলে তাঁরা অনেকে পড়াশোনায় উৎসাহিত হবেন। কিন্তু পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত, পুরুষ পাঠক-প্রধান লাইব্রেরিতে তাঁরা অনেকেই যেতে সংকোচ বোধ করেন।” মেয়েদের স্বৈাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবেই ১৯টি অতিরিক্ত জেলা লাইব্রেরি, ১৫টি টাউন লাইব্রেরি এবং ১৬টি গ্রামীণ লাইব্রেরির প্রস্তাব দিয়েছেন করিম চৌধুরী।
প্রস্তাব পাঠানোর পর দু’বছর কেটে গেলেও অবশ্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। “অর্থমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই মহিলা গ্রন্থাগারের জন্য বরাদ্দ করবেন,” বলেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী। আগামী বাজেট বরাদ্দে সেই অনুমোদন মিলবে বলে আশাবাদী তিনি। ২০১১ সালে ক্ষমতা বদলে যাওয়ার পরে তফসিলি ও সংখ্যালঘু এলাকায় মহিলা গ্রন্থাগার তৈরির ওপরে জোর দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। সাধারণত যে মহিলারা প্রথাগত লেখাপড়ার বাইরে রয়ে গিয়েছেন, যাঁরা পিছিয়ে-পড়া সম্প্রদায়ের ছাত্রী, তাঁদের এই গ্রন্থাগারগুলি সাহায্য করবে বলেই জানানো হয়েছিল। সে সময়ে সরকারি অনুষ্ঠানে গ্রন্থাগার মন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেছিলেন মহিলা লাইব্রেরি তৈরির কথা। দু’বছরেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করতে পেরে তিনি নিজেই বিব্রত।
এ সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় বিরোধী দলগুলি। রাজ্যের প্রাক্তন গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিপিএমের তপন রায় বলেন, “কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করা উচিত। পরিকল্পনা ও রূপায়নে খামতি রয়ে গিয়েছে।” স্থায়ী কর্মীর অভাবে সার্বিক ভাবে রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলির পরিকাঠামো আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। এই অবস্থায় নতুন গ্রন্থাগার তৈরি করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নও উঠছে।
কর্মীর সমস্যা যে রয়েছে, তা স্বীকার করছেন গ্রন্থাগার মন্ত্রীও। তাই বলে স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। “বরাদ্দ পেলেই ঠিক করে ফেলব, কোথায় কোথায় মেয়েদের লাইব্রেরি হবে,” বলেন তিনি। “যে সব এলাকায় মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে, সংকোচ বোধ করছে বেশি, সেখানেই লাইব্রেরি করব আগে।” |