গত বার সামনে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। জনমোহনী বাজেট পেশের দায় ছিল রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের। এখন শিল্প ও অর্থ দফতর, দু’টিরই দায়িত্বে তিনি। অন্যান্য দায় সামলে এ যাত্রায় রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্যের ছবিতে পরিবর্তন আনতে কী পদক্ষেপের কথা তিনি ঘোষণা করেন, সেই দিকে তাকিয়ে আজ শিল্প ও বণিক মহল। অমিতবাবু তাঁর তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন সোমবার। কার্যত শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সফল হয়ে ওঠার জন্য জমি তৈরির পরীক্ষায় নামতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী।
শিল্প মহল চাইছে, এই বাজেটে শুধু কর ছাড় নয়, শিল্প স্থাপন ও ব্যবসার প্রসারে সার্বিক ভাবে কিছু সদর্থক ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করা হোক। শিল্পের উপযোগী পরিকাঠামো নির্মাণের স্পষ্ট দিশা থাকুক। এ রাজ্যে শিল্প স্থাপন বা ব্যবসা করার পথ সুগম করতে প্রশাসনিক পদ্ধতি আরও সরল করার পথে হাঁটুক রাজ্য সরকার।
কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের অন্যত্রও শিল্প ছড়িয়ে দিতে উৎসাহী রাজ্য সরকার। কলকাতার বাইরে যেতে খুব একটা আপত্তি নেই শিল্পপতিদেরও। তবে তাঁদের দাবি, সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকতে হবে। বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত এবং এমসিসি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় অগ্রবালের মতে, বাজেটে পরিকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে রাজ্যের অন্যত্র বিনিয়োগকারীদের টানতে হলে সড়ক উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণ জরুরি।
মুম্বইয়ে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরে শিল্পের প্রতি রাজ্য সরকারের মনোভাবের একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পেয়েছেন রাজ্যের শিল্প-কর্তারা। রাজ্যের নতুন স্লোগানই হল, ‘শিল্প করুন বাংলা গড়ুন’। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধী এই সরকার তার ঘোষিত অবস্থান থেকে না সরলেও জমির সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ কাটোয়ায় এনটিপিসি-র বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি নিয়ে জট কাটানো। এর আগে মিৎসুবিশি-সহ বিভিন্ন শিল্প প্রকল্পের নানা সমস্যা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গতি আনা ও তা সরল করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি কর আদায় ব্যবস্থায় স্বচ্ছ্বতা এসেছে বলেও দাবি রাজ্যের।
শিল্প মহল চাইছে, এই ইতিবাচক মনোভাবের ছাপ আরও স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ুক এ বারের বাজেটে। সঞ্জয় অগ্রবালের তাই আবেদন, রাজ্যে শিল্প বা ব্যবসা করা যে সহজ, প্রশাসনিক সংস্কারের বার্তা দিয়ে সেই ধারণা আরও মজবুত করুন অর্থমন্ত্রী। শিল্পের মতোই ব্যবসায়ীদের জন্যও রাজ্য একটি পৃথক বাণিজ্য নীতি তৈরি করুক, দাবি বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দিব্যেন্দু বসুর।
স্বাভাবিক ভাবেই অর্থমন্ত্রীর কাছে কর সংক্রান্ত বেশ কিছু চাহিদা রয়েছে শিল্প-কর্তাদের। প্রবেশ কর ও ভ্যাট বা যুক্তমূল্য করের সরলীকরণ ও দ্বৈত সিদ্ধান্তের ব্যবস্থা তুলে দেওয়া সেগুলির অন্যতম। সম্প্রতি রাজ্যের ১৮টি বণিকসভার কর্তাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকেও বিষয়গুলি উঠেছিল। বণিকসভা ফিকি, বেঙ্গল চেম্বার, ভারত চেম্বার, ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ-সহ অনেকেই প্রবেশ করকে আর্থিক বোঝা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তবে শেষ পর্যন্ত এই কর কাঠামোর কতটা সংশোধন হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলেই। কারণ ওই বৈঠকেই অমিতবাবু দাবি করেছিলেন, অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে এই করের পরিমাণ বেশি নয়। এ রাজ্যে শিল্প সংস্থাকে কোনও চুঙ্গি করও দিতে হয় না। তাঁর দাবি, রাজ্যে পরিকাঠামো নির্মাণের খরচের বোঝা সামলাতেই এই কর আদায় জরুরি। বণিকসভাগুলিও যে এই করের বিরোধী, তা নয়। তবে তাদের দাবি, পণ্য তৈরির জন্য আমদানি করা কাঁচামালকে এই কর থেকে ছাড় দেওয়া হোক। না হলে প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য রাজ্যের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে পশ্চিমবঙ্গ।
ফিকি-র দাবি, হলদিয়ায় এমনিতেই আমদানি কর সবচেয়ে বেশি হারে দিতে হয়। এর উপর এই প্রবেশ করের বোঝা বিপুল চাপ তৈরি করছে শিল্পসংস্থার উপর।
ভ্যাট-এর অর্থ পরে সংস্থাকে মিটিয়ে দেওয়ার (রিফান্ড) প্রক্রিয়াটি এখনও প্রচুর সময়সাপেক্ষ বলে অভিযোগ শিল্প-কর্তাদের। এ ছাড়া, একই ধরনের দু’টি পণ্যের ক্ষেত্রে দু’রকম ভ্যাট নেওয়ার সিদ্ধান্তও পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। |