দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের তৃণমূল শাসিত দারিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ ৮৯ জন দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন। রবিবার বিধান ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের দলে স্বাগত জানান। একই সঙ্গে কংগ্রেস-ত্যাগীদের পুরনো দলে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সেই অনুষ্ঠানে অধীর ছাড়াও সদ্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে তৃণমূলত্যাগী পঞ্চায়েত প্রধান নন্দরানি সর্দার বলেই ফেললেন, “ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে তৃণমূল করতে পারছিলাম না। তাই কংগ্রেসে ফিরে এলাম।” তাঁর কথার সূত্র ধরেই সোমেনবাবুও জানান, ব্যক্তিসম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছিল
বলেই তাঁকে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে আসতে হয়েছে। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে সোমেনবাবু জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হুগলির অনেক তৃণমূল কর্মী কংগ্রেসে যোগ দেবেন। |
তৃণমূলত্যাগীদের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে সদ্য
দলে ফেরা সোমেন মিত্র। পাশে প্রদীপ ভট্টাচার্য ও মানস ভুঁইয়া। রবিবার বিধান ভবনে। —নিজস্ব চিত্র। |
এতদিন একতরফা ভাবে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটানো এ দিনের ঘটনাকে ‘রিভার্স স্যুইং’ বলে অভিহিত করেন অধীর। তাঁর কথায়, “এই রিভার্স স্যুইংয়ের ক্ষমতা কতটা দু’দিন বাদে আপনারা (তৃণমূল নেতৃত্ব) টের পাবেন।” এতদিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সোমেনবাবুর মতো নেতার প্রত্যাবর্তন এবং অধীর প্রদেশ সভাপতি হওয়ার পরেই শক্তপোক্ত নেতৃত্বে কংগ্রেসের পালে পাল্টা হওয়া লাগতে শুরু করেছে বলেই দলের নেতাদের একাংশের মত। এ দিন বিধান ভবনে মানসবাবুর মতো প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাও বলেন, “ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনীতিতে এটা নতুন মোড়।”
লোকসভা ভোটের আগে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কংগ্রেস কর্মীদের ফের পুরনো দলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে অধীর বললেন, “যাঁরা তৃণমূলে গিয়েছিলেন, কংগ্রেসে ফিরে আসুন। কথা দিচ্ছি পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা দেব আপনাদের।” কংগ্রেসে ফিরে এলে কর্মীদের সম্মান-মর্যাদা দিতে পারলেও, নিরাপত্তা তাঁরা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট বলেন, “আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই দিতে হয়। এ রাজ্যে কোনও মানুষই নিরাপদ নন। কংগ্রেসের কর্মীরা জানেন, কী ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে লড়ে বেঁচে থাকতে হয়।” সেইসঙ্গে দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে দলীয় নেতৃত্বকে এ দিন অধীর বার্তা দেন, “রাজ্যের যে প্রান্তেই রাজনৈতিক সন্ত্রাস হবে, সেখানে সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বকে হাজির হতে হবে। দরকার হলে গোটা প্রদেশ কংগ্রেসই উপদ্রুত এলাকায় গিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়াবে।”
প্রত্যাশিতভাবেই দলত্যাগের এই ঘটনাকে কোনও গুরুত্বই দেননি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তাঁরা কী কারণে এসেছিলেন, কেনই বা গেলেন, তা তাঁরাই জানেন! আসলে স্রোতের মতো অনেকেই আসে যায়। কিন্তু এতই নিঃশব্দে এই আসা যাওয়া ঘটে, তা কোনও ভাবেই উন্নয়নের গতিকে রুদ্ধ করতে পারবে না।” তৃণমূল নেতৃত্ব যে এই যোগদানকে গুরুত্ব দেবেন না, তা আঁচ করে অধীরের মন্তব্য, “তৃণমূল যত এই ধরনের ঘটনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে, ততই তারা পতনের পথে এগিয়ে যাবে।” |