রং-তুলির ছোঁয়ায় গরাদের ও-পারে গানও এ বার ছবি
জেলের উঁচু পাঁচিলের গণ্ডি থেকে মুক্তির স্বপ্ন তাঁর কাছে গোলকধাঁধা। তাঁর ছবিতেও সেই গোলকধাঁধাই বারবার উঠে আসে।
‘হংসরাজ’ ছবির বিখ্যাত গান ‘শহরটার এই গোলকধাঁধায় আঁধার হল মন...’। রবিবার আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সেই গানটাই গাইছিলেন শিল্পী অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। গান শেষ হতেই একসঙ্গে চলতে শুরু করল মুক্ত ও বন্দি শিল্পীদের রং-তুলি। বছর পঁয়তাল্লিশের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির তুলিতে ফুটে উঠল শহুরে রাস্তার গোলকধাঁধা। এমন ছবি কেন? জবাব এল, “আমার কাছে মুক্তির স্বপ্নও যে গোলকধাঁধাই।”
বাইরের মুক্ত শিল্পীদের সঙ্গে মিলেমিশে আলিপুর জেলের বন্দিদের শিল্পীদের ছবি আঁকার নতুন নয়। নতুন নয় বাইরের পরিবেশে গিয়ে বন্দিদের ছবি আঁকাও। কিন্তু আলিপুর জেলে বন্দিদের এ দিনের ছবি আঁকার কর্মশালা তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা।
বন্দি-শিল্পীদের সামনে এ দিন খালি গলায় গান গেয়েছেন গায়ক অরিন্দম। ‘হংসরাজ’-এর জনপ্রিয় ওই গানটির পাশাপাশি বৃষ্টিভেজা মেঘলা দিনে গেয়েছেন ভিজে মেঠো পথ ধরে গরুর গাড়ির দৌড়ে যাওয়ার গান। আর এই গান দু’টিই রং-তুলিতে রূপ পেয়েছে বন্দিদের ক্যানভাসে। সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন বাইরের শিল্পীরাও।
ছবিতে-গানে কর্মশালা। রবিবার, আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। —নিজস্ব চিত্র।
শিল্পী হয়ে ওঠা বন্দিদের অনেকে প্রথমে তুলি ধরতেই জানতেন না। তা সে বৌবাজার বিস্ফোরণ মামলায় ধৃত সাট্টা ডন রশিদ খানই হোন বা দিলীপ লেট, শ্রীকান্ত হালদার, দেবদাস ঘোষ, বাপি বাউড়ি কিংবা মানব দাস, মন্টু দাস, পল্টু বিশ্বাসের মতো যাবজ্জীবনের আসামি। তার পরে রং-তুলিই পাল্টে দিয়েছে গরাদের ওপারের সাদাকালো জীবন। জেলে বসেই কয়েক বছর ধরে ছবি আঁকছেন ওঁরা। বাইরে খোলা আকাশের নীচেও একাধিক বার ছবি এঁকেছেন। রাজ্যের অন্য জেলে গিয়ে এই শিল্পী-বন্দিরা ছবি আঁকায় উৎসাহ দিয়ে এসেছেন সেখানকার বন্দিদেরও।
কিন্তু এ দিনের অনুষ্ঠান ওই সব বন্দি-শিল্পীদের ছবি আঁকায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন জেলের আঁকার শিক্ষক শিল্পী চিত্ত দে। গানের সঙ্গে ছবির এই ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। চিত্তবাবুর মতে, “অনেক দিন ধরেই ওঁরা ছবি আঁকছেন। বাইরেও ছবি এঁকেছেন। এ বার আমরা চাইছি, বিভিন্ন বিষয় দিয়ে দিতে। যার ভিত্তিতে ওঁরা নিজেদের মতো করে ছবি আঁকবেন।” চিত্তবাবু বলেন, “গানের বিষয়কে রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলবেন ওঁরা। যাতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিষয় ঘিরে ছবি আঁকতে পারেন।”
তবে শুধু বন্দিরাই নন, গানকে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে কর্মশালায় অংশ নেন উমা সিদ্ধান্ত, আদিত্য বসাক, ছত্রপতি দত্ত, প্রদীপ মৈত্র, পল্লবী মুখোপাধ্যায়, সুব্রত চৌধুরীর মতো শিল্পীরাও। চিত্তবাবুর মতে, “বাইরের শিল্পীদের সঙ্গে ছবি আঁকতে গিয়ে আত্মবিশ্বাস পান বন্দিরা। বন্দিদের সঙ্গে ভাবনার আদানপ্রদান করেন তাঁরা।” শিল্পী উমা সিদ্ধান্তের কথায়, “একদম অন্য অভিজ্ঞতা। চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দিদের ছবি দেখলে তাঁদের মানসিক অবস্থাটা বোঝা যায়। ছবির মধ্যেই মুক্তির স্বাদ ফুটিয়ে তোলেন ওঁরা।” শিল্পী অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের সঙ্গে ছবি এঁকে বন্দিদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। ওঁদের চোখ-মুখ দেখলেই বোঝা যায়।”
একটি সিরিয়ালের শু্যটিংয়ের জন্য এক বার প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়েছিলেন শিল্পী অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। তার পরে এ দিনই ফের জেলের ভিতরে ঢুকলেন। “অনুষ্ঠানটা করতে আসার সময়ে খুব মন খারাপ লাগছিল। কিন্তু বন্দিদের মধ্যে ঘরোয়া পরিবেশে গান গেয়ে এক্কেবারে অন্য রকম লাগল। এই অভিজ্ঞতা জীবনের সম্পদ। বন্দিদের চোখে-মুখে খুশি, ওঁদের উৎসাহ অবাক করে দিয়েছে,” বলছিলেন অরিন্দম।
উচ্ছ্বসিত কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফিও। তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরেই বন্দিরা ছবি আঁকছেন। দারুণ আঁকেন। ভাবছি ওঁদের অন্য শিল্পসৃষ্টিও শেখাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.